১৬ থানার মধ্যে ১৪টি সচল

হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হওয়ায় পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় বসার অবস্থা না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

নগরের চকবাজার থানায় কাজ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলেছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের লালচান্দ সড়কে অবস্থিত চকবাজার থানা। প্রধান ফটকের সামনে দায়িত্ব পালন করছেন সেনা সদস্যরা। থানা প্রাঙ্গণে পুলিশের সদস্যসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর তাঁর কক্ষে আছেন। সঙ্গে আছেন চারজন উপপরিদর্শক (এসআই)। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার চিত্র এটি।

পাশের কক্ষে ডিউটি অফিসার ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারাও তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিকেল পর্যন্ত থানায় মামলা কিংবা কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি। নগরের পাঁচলাইশ থানার পুলিশ সদস্যরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওই থানায় কোনো জিডি কিংবা মামলা হয়নি।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর গতকাল নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর থানায় হামলা কিংবা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তাই তিনি থানায় আছেন। তবে গত কয়েক দিন থানায় লোকজন কেউ আসেননি। কেউ এলে তাঁরা মামলা কিংবা জিডি নেবেন।

শুধু চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানা নয়, নগরের ১৬ থানার মধ্যে ১৪টি সচল রয়েছে। সচল বাকি থানাগুলো হলে বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, বন্দর, চান্দগাঁও, কোতোয়ালি, পাহাড়তলী, আকবর শাহ, ডবলমুরিং, হালিশহর ও কর্ণফুলী। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হওয়ায় নগরের পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় বসার কোনো অবস্থা নেই।

এ কারণে এই দুটিতে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাহারায় পুলিশের সদস্যরা তাঁদের কর্মস্থলে যোগ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আবদুল মান্নান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নগরের ১৬ থানার মধ্যে ২টি ছাড়া সব কটিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত সোমবার বিকেল থেকে চট্টগ্রাম নগরের অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, নথি লুট হয়। এরপর পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানায় দেখা গেছে, গেটে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ওই সময়ে পরিদর্শনে আসেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমানসহ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই থানা।

মূল ফটকে রয়েছে সাঁজোয়া যান, পিকআপসহ পাঁচটি পোড়া গাড়ি। পুরো থানা ভবন হামলায় ও আগুনে পুড়ে তছনছ হয়ে আছে। নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ায় পুরোদমে চালু করতে একটু সময় লাগবে।’

নগরের পাহাড়তলী থানায় বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে, পরিষ্কারের কাজ চলছে। সরানো হচ্ছে পুড়ে যাওয়া আসবাব। একই চিত্র নগরের আকবর শাহ থানায়ও।

থানায় কাজে যোগ দিতে আসা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ তাঁদের ১১ দফা দাবি যাতে বাস্তবায়িত হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে পুলিশ যাতে আর ব্যবহার না হয়। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।