সাফজয়ী মাসুরাকে কলারোয়ায় সংবর্ধনা

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাসুরাকে ৫০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড উপহার হিসেবে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্য মাসুরা পারভিন ও তাঁর পরিবারকে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাসুরাকে ৫০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি জমিতে মাসুরার পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস।

ইউএনও রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মাসুরার বাবা মো. রজব আলী, পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান, উপজেলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিরউদ্দীন মৃধা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাসুরার মা ফতেমা বেগম ও বাবা রজব আলীকে ফুল, ক্রেস্ট ও উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মাসুরার ছোট বোন সুমাইয়া পারভিনও উপস্থিত ছিল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, মাসুরার জন্য সাতক্ষীরা তথা কলারোয়াবাসীর আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। মাসুরার গ্রামের বাড়ি কলারোয়া উপজেলার কয়লা উপজেলার আলাইপুরে। মাসুরা এখন শুধু সাতক্ষীরার নয়, সারা দেশের গর্ব। তাকে দেখে অভিভাবক ও মেয়েরা অনুপ্রেরণা পাবে। অভিভাবকেরা তাঁদের মেয়েদের খেলার মাঠে পাঠাতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাবেন। একসময় মেয়েদের খেলাধুলা নিয়ে নানা ধরনের কথা হতো, এখন সেটা আর থাকবে না।

স্মৃতিচারণা করে মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ‘প্রথম জীবনে আমি রেস্তোরাঁয় শ্রমিকের কাজ করেছি। পরে শহরের নানা জায়গায় চায়ের দোকান ছিল। কয়েক দিন আগেও ভ্যানে করে ফল-সবজি বিক্রি করেছি। তবে শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্‌রোগের সমস্যায় এখন সেভাবে কাজ করতে পারি না।’

এমন অভাবের সংসারে মেয়ে ফুটবল খেলুক, সেটা চাননি রজব আলী। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জেদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে আমাকে। অবশ্য মেয়ের জেদের চেয়ে মাসুরার কোচ আকবর আলীর চেষ্টা ও স্ত্রী ফাতেমা বেগমের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছি। এখন আমি মেয়েকে নিয়ে গর্ব করি। সাতক্ষীরা ও দেশের মানুষের ভালোবাসায় আমি অনেক খুশি।’

ইউএনও রুলী বিশ্বাস বলেন, ‘মাসুরা একজন রিয়েল হিরো। তিনি সাতক্ষীরা তথা দেশের জন্য অনন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। সবাইকে মাসুরাদের পাশে থাকতে হবে। কলারোয়া আলাইপুর গ্রামে যদি সরকারি জমি থাকে সেখানে মাসুরা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। সরকারি জমি না থাকলে সবার সহযোগিতায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাসুরা পারভিন বলেন, কলারোয়া তথা সাতক্ষীরাবাসীর কাছে তিনি অনেক কৃতজ্ঞ। দেশের মানুষ নারী ফুটবলারদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে। সবাই তাঁদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। দেশের মানুষ এভাবে পাশে থাকলে তিনি বিশ্বাস করেন, নারী ফুটবলারেরা দেশের জন্য আরও করতে পারবেন।

মাসুরা আরও বলেন, সাতক্ষীরায় ফুটবলসহ অন্যান্য খেলায় মেয়েদের অনেক প্রতিভা রয়েছে। তাঁদের মাঠমুখী করতে হবে। অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। মেয়েদের খেলার জন্য আলাদা মাঠের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে এখনকার মতো অবস্থা আর থাকবে না। সব শ্রেণি-পেশার মা-বাবা তাঁদের মেয়েদের খেলার মাঠে পাঠাতে উৎসাহী হবেন।