সুমাইয়াকে ছাড়া সোয়াইবার ঈদ
প্রতি রাতে মায়ের বুকের দুধের জন্য কান্নাকাটি করে সোয়াইবা। ঘুমের মধ্যে শরীরের সঙ্গে লাগলেই দুধ খাওয়ার জন্য মুখটা হা করে থাকে। এইটা দেখে বুকটা কান্নায় ভেঙে যায়। এই অবুঝ শিশুটার ফিডারের দুধ খেয়ে কি পেট ভরে? কথাগুলো বলতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে নানি আসমা বেগমের।
গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে ষষ্ঠ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে র্যাবের হেলিকপ্টারের টহল দেখছিলেন শিশু সোয়াইবার মা সুমাইয়া আক্তার। সে সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল। হঠাৎ একটি গুলি এসে সুমাইয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে বারান্দার মেঝেতে লুটিয়ে প্রাণ হারান তিনি।
সুমাইয়ার ভাড়া বাসাটি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায়। গতকাল শনিবার সে বাসায় যান এই প্রতিবেদক। সেখানে তিনি সুমাইয়ার মা আসমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন। তখন মামা মো. সজলের সঙ্গে বিছানায় বসে খেলা করছিল ১০ মাস বয়সী শিশু সোয়াইবা। মায়ের মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল দুই মাস, জন্ম গত বছরের ১২ মে। সুমাইয়া পোশাকশ্রমিকের কাজ করতেন।
আসমা বেগম বলেন, গত ঈদুল আজহায় সুমাইয়া অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজ হাতে ১ মাস বয়সী সোয়াইবার জামা তৈরি করেছিলেন। সেই জামা মেয়েকে পরিয়ে সে কী আনন্দ তাঁর...।’
ঈদ প্রসঙ্গ তুলতেই আসমা বেগম বলেন, তাঁর মেয়ে সুমাইয়া ভালো রান্না করতে পারত। ওর হাতের খাবার খেতে সবাই পছন্দ করত। এবার আর তাঁদের মুখে খাবার উঠতে চাইছে না।
দুই বছর আগে সুমাইয়ার বাবা সেলিম মাতবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চর নন্দনপুর এলাকায়। সুমাইয়াসহ সেলিম মাতবর ও আসমা বেগম দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। সুমাইয়া মারা যাওয়ার ১৫ দিন পর তাঁর স্বামী একবার মেয়েকে দেখতে এসেছিলেন—উল্লেখ করেন আসমা বেগম।
আসমা বেগম জানান, সুমাইয়া নিহতের পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সোয়াইবাকে ২ লাখ টাকা এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে নতুন জামাসহ ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে।