পাহাড়ঘেরা ঝিরিপথের পায়ে পায়ে রোমাঞ্চ, অদেখা ধুমনি ঘাটে যেভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনি ঘাটের কথা অনেক পর্যটকেরই অজানা। পাহাড়ি পথের নির্জনতা ঘেরা জায়গাটির নিসর্গ শোভায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। যেতে চোখে পড়বে জুমঘর, নাম না-জানা পাহাড়ি ফুল, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনচিত্র।

পাহাড়, প্রাণ–প্রকৃতির এমন অকৃপণ সৌন্দর্য দেখতে হলে আসতে হবে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ধুমনি ঘাটে। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

সবুজ পাহাড়ের ঝরনার স্রোত। আবার বিশাল পাথরে ঝলমলে রোদের খেলা আর পাখির কলরব। সব মিলিয়ে এ জায়গা পছন্দ করবেন না—এমন ভ্রমণপ্রেমীর দেখা পাওয়া মুশকিল। এমন নিসর্গ যাঁরা দেখতে চান, তাঁরা যেতে পারেন মনভোলানো ‘ধুমনি ঘাটে’।

খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনি ঘাটের কথা অনেক পর্যটকেরই অজানা। পাহাড়ি পথের নির্জনতা ঘেরা জায়গাটির নিসর্গ শোভায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। যেতে চোখে পড়বে জুমঘর, নাম না-জানা পাহাড়ি ফুল, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনচিত্র।

মহালছড়ি থেকে সিন্দুকছড়ি যাওয়ার পথে সেনা ক্যাম্পের বিপরীতে পাহাড়ের নিচে নামলেই দেখা মেলে ধুমনি ঘাটের। জায়গাটিতে যেতে সরু পাহাড়ি পথে প্রায় আধা কিলোমিটার হাঁটতে হয়। দুই পাশে ঘন গাছপালা, ছোট ঝিরি পার হওয়ার এ অভিযানও পর্যটকদের পছন্দের।

ধুমনি ঘাটের ঝরনায় গা ভাসিয়েছেন একদল পর্যটক। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকাল অথবা সকালে গেলে জায়গাটির মূল সৌন্দর্য দেখা যায়। সিন্ধুকছড়ি এলাকার রতন ত্রিপুরা বলেন, সকালে এলে মনে হবে পুরো পাহাড়ের সদ্য ঘুম ভেঙেছে। ঝরনার শব্দ আর পাখির ডাক—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি।

মহালছড়ি থেকে সিন্দুকছড়ি যাওয়ার পথে সেনা ক্যাম্পের বিপরীতে পাহাড়ের নিচে নামলেই দেখা মেলে ধুমনি ঘাটের। জায়গাটিতে যেতে সরু পাহাড়ি পথে প্রায় আধা কিলোমিটার হাঁটতে হয়। দুই পাশে ঘন গাছপালা, ছোট ঝিরি পার হওয়ার এ অভিযানও পর্যটকদের পছন্দের।

ধুমনি ঘাটের নাম নিয়েও রয়েছে নানা গল্প। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, পাহাড়ের গুহা দিয়ে যখন ঝরনার পানি প্রবাহিত হয়, তখন ‘ধুম ধুম’ শব্দে চারপাশ মুখর হয়ে ওঠে। সেই ধ্বনির নাম থেকেই জায়গাটির নাম হয় ‘ধুমনি’। তবে কারও মতে, এ এলাকায় একসময় ধুমনি নামের এক পাহাড়ি নারী বসবাস করতেন। তাঁর স্মৃতিতেই জায়গাটির নাম ধুমনি ঘাট হয়েছে।

জায়গাটি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাছে পবিত্র। বিশেষ ধর্মীয় দিবসে এখানেই আয়োজন হয় পূজা, কীর্তন ও আরাধনার। জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা সত্যধন ত্রিপুরা বলেন, ‘ধুমনি ঘাট আমাদের কাছে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি ভক্তির জায়গা। এখানে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার পদচিহ্ন রয়েছে, যা আমরা শ্রদ্ধাভরে দেখি এবং পূজা করি।’

ধুমনি ঘাটে যাওয়ার পথে পাহাড়ি ট্রেইলে পড়বে এমন পাথর, ঝিরি–ঝরনা। পায়ে পায়ে রোমাঞ্চের হাতছানি। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

যেভাবে যাবেন

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে জায়গাটিতে যেতে হলে প্রথমে খাগড়াছড়ির গুইমারা জালিয়াপাড়ায় যেতে হবে। সেখান থেকে সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়কের ধুমনি ঘাট এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে যাওয়া যাবে। যেতে সময় লাগবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।

‘ধুমনি ঘাট আমাদের কাছে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি ভক্তির জায়গা। এখানে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার পদচিহ্ন রয়েছে, যা আমরা শ্রদ্ধাভরে দেখি এবং পূজা করি।’
সত্যধন ত্রিপুরা, স্থানীয় বাসিন্দা।

আবার খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে কেউ যেতে চাইলে প্রথমে মহালছড়ি যেতে হবে। সেখানে যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। এরপর মহালছড়ি থেকে সিন্দুকছড়ি যেতে হবে। সেখানে যেতে সময় লাগবে আরও ১৫ থেকে ২০ মিনিট। মহালছড়িতে রাতে অবকাশযাপনের সুযোগ সীমিত। এ ক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি সদরে থাকার ব্যবস্থা করা ভালো।

তবে ধুমনি ঘাটে যেতে হলে সতর্কতা জরুরি। পথে অনেক জায়গায় পাথর পিচ্ছিল, আবার ঝরনার নিচে ঝিরিতে গভীর গর্তও রয়েছে। তাই পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকতে হবে।