সুনামগঞ্জের ডিসির সাক্ষাৎকার

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অবহেলা বা অনিয়মের সুযোগ নেই

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এবারও এই সময়ে বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ অবস্থায় সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর আবেদন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এবার জেলার ১২টি উপজেলার ৪০টি হাওরে ৭৩৫টি প্রকল্পে ৫৯১ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। জেলার ৯৫টি হাওরে সোয়া দুই লাখ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাজে তদারকির অভাব, অনিয়ম ও গাফিলতি রয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে হাওরে নতুন নীতিমালায় বাঁধের কাজ হচ্ছে। কাজে পাউবোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও হাওরে বাঁধ নির্মাণ-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর সঙ্গে।

প্রশ্ন:

নির্ধারিত সময় শেষ, কিন্তু এবারও বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হলো না কেন?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: কাজ প্রায় শেষ। এবার সাত শর ওপরে প্রকল্পের কাজ হয়েছে। হাতে গোনা কিছু প্রকল্প ছাড়া সব প্রকল্পেই মাটির কাজ শেষ। প্রাকৃতিক কারণেই বাঁধের কাজে কোনো কোনো স্থানে কিছুটা বিলম্ব হয়। গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে কোনো কোনো প্রকল্পে সমস্যা হয়েছে, সেগুলোর কাজ হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি ভালো। উপজেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দ্রুত সব কাজ শেষ করার জন্য।

প্রশ্ন:

প্রতিবছরই সময় বাড়ানো হয়, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায় না কেন?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: শুরুতে হাওর থেকে পানি ধীরে নামার কারণে প্রকল্প গ্রহণের কাজ যথাসময়ে করা যায় না। প্রকল্প নির্ধারণে দেরি হলে কাজ শুরুতেও দেরি হয়। ১৫ ডিসেম্বর ইচ্ছা করলেও সব প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ শুরু করা যায় না। যেসব প্রকল্পে কাজ দেরিতে শুরু হয়, সেগুলোর কাজ শেষ হতেও কিছুটা সময় বেশি লাগে। আবার কাজ শুরুর পর অনেক স্থানে মাটি পাওয়া যায় না। মাটি কাটার যন্ত্রেরও স্বল্পতা থাকে। শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে মাঠে নানা অভিযোগ থাকে। এগুলো নিষ্পত্তি করতেও সময় লাগে। তবে এবার নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। এটি ফসল তোলা পর্যন্ত চলমান থাকবে।

প্রশ্ন:

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিবছর। এবারও আছে। বেশি প্রকল্প নেওয়ায় কাজে চাপ বাড়ে কি?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: সুনামগঞ্জের হাওরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এবার কাজ হচ্ছে ৫৯১ কিলোমিটারের। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মাঠে জরিপ ও স্থানীয় লোকজনের চাহিদা যাচাই-বাছাই করেই প্রকল্প নেওয়া হয়। আসলে বেশি প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ নেই বা নেওয়া হয় না। কাজেই চাপের কিছু নেই। কাজ করতেই হবে।

প্রশ্ন:

কাজে অবহেলা, গাফিলতি আছে বলে মনে করেন কি?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: হাওরে বাঁধের কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করা হয়। মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের কঠোর তদারকি থাকে। জেলা ও উপজেলা কমিটির পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় আলাদা করে কমিটি করে দেওয়া আছে। এতে প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তা ছাড়াও জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের লোকজন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আছেন। তাঁরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো হাওরে যাচ্ছেন। কাজ দেখছেন। যেখানে সমস্যা বা ত্রুটি দেখা দেয়, সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই কাজে কোনো অবহেলা বা অনিয়মের সুযোগ নেই।

প্রশ্ন:

প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনে রাজনৈতিক বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ আছে?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: কাজের জন্য সরাসরি আমাদের কেউ কিছু বলেন না। এগুলো আসে অভিযোগ হিসেবে। আমরা যাচাই-বাছাই করি। তবে বাঁধের কাজের প্রকল্প নির্ধারণ, পিআইসি গঠন থেকে শুরু করে সব কাজ হয় নীতিমালা অনুযায়ী। মূল কাজটি আসলে স্থানীয়ভাবে গঠিত পিআইসির লোকজন করে থাকেন। এসব কমিটিতে হাওরের প্রকৃত কৃষক ও সুবিধাভোগীরা থাকেন। গণশুনানি করে এসব কমিটি গঠন করা হয়।

প্রশ্ন:

বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ করতে কী উদ্যোগ নেওয়া দরকার?

মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী: হাওরের ভূপ্রকৃতিটাই এমন, এখানে ফসল রক্ষা করতে হলে বাঁধ দিতেই হবে। এই কাজে প্রচুর মাটি লাগে। এখনই হাওরে বাঁধের কাজে মাটি পাওয়া যায় না। এই সংকট আরও বাড়বে। আমি টেকনিক্যাল লোক নই। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন এবং এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে, বিশেষ করে বাঁধের যে স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ (ক্লোজার), সেখানটা পাকা করে আংশিক স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হবে। বর্ষায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহের জন্য সেখান থেকে মাটি সরিয়ে দেওয়া হবে। আবার বাঁধের সময় সেটি মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে। এতে বাঁধ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত ও স্থায়ী হবে। তবে সব জায়গায় এটা করা যাবে না।