যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে দুর্গামন্দিরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধচিত্র উপস্থাপন
পৃথিবীর সব যুদ্ধ ও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মহাভারতে বর্ণিত ধর্মযুদ্ধের বিভিন্ন কাহিনি, যুদ্ধক্ষেত্র ও যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন সমরাস্ত্র এবং বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি দুর্গামন্দিরে। উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাঁচক দাসপাড়া নিত্যানন্দ ধামে দুর্গাপূজা মণ্ডবের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধচিত্র। এ ছাড়া হিন্দুধর্মের শাস্ত্রমতে, ১২ মাসে ১৩ পার্বণের বিভিন্ন দেবতার প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দেখতে ভিড় করছেন হাজারো মানুষ।
নড়িয়ার পাঁচক দাসপাড়া নিত্যানন্দ ধাম দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা মহা ধুমধামে দুর্গাপূজা করি। পূজা উপলক্ষে পাঁচ দিন নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ আনন্দ করেন। প্রতিবছরই ব্যতিক্রম কিছু আয়োজন করার উদ্যোগ নিই। এ বছর মানুষকে মন থেকে যুদ্ধভাব পরিহার করে শান্তি ও ন্যায়ের দিকে উৎসাহিত করার জন্য দুর্গামন্দিরের বাইরে মহাভারতের বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।’
বিকাশ দাস আরও বলেন, ‘আমরা প্রার্থনা করছি, বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটছে, তা যেন অচিরেই বন্ধ হয়। দুর্গামন্দিরে এসে মানুষ মহাভারতের দৃশ্য দেখে পৃথিবীব্যাপী এত অশান্তি ও যুদ্ধের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। তখনই প্রতিটি মানুষ মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করছেন, পৃথিবীব্যাপী ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী ঘটনা, যুদ্ধ ও অশান্তি দূর হোক। সব স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক।’
পাশের মশুরা ঘোষপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে পৌরাণিক কাহিনির দশাবতার ও দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চিত্র। নানা পৌরাণিক কাহিনির ১৫০টি প্রতিমা দিয়ে সাজানো হয়েছে মন্দিরটিকে। দুর্গামন্দিরে এসব স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শান্তি ও মঙ্গল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানোর জন্য। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মন্দিরগুলোতে প্রার্থনা করা হচ্ছে।
মশুরা ঘোষপাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরের দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি গোপাল চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জগতের নানা স্থানে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বত্র যুদ্ধ, অশান্তি, হানাহানি ও অধর্মের কাজ হচ্ছে। আমরা সর্বত্র শান্তি চাই। এ বছর দুর্গা মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা, অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করে দাও।’
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার দুটি মন্দিরে মহাভারত ও পৌরাণিক নানা কাহিনির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই দুটি মন্দিরে হাজারো মানুষের ভিড় হচ্ছে। দর্শনার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য সার্বক্ষণিক মন্দির দুটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকেরা তৎপর রয়েছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের শরীয়তপুর জেলা কমিটির সহসভাপতি শংকর প্রসাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর শরীয়তপুরে ৯৮টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিকদের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা চলছে। এ বছর মা দুর্গা ঘোড়ায় চরে ফিরে যাবে। শাস্ত্রমতে, জগৎ সংসার অশান্ত হওয়ার ইঙ্গিত। তাই তো জেলার বিভিন্ন মন্দির জগৎ সংসারের মঙ্গল ও শান্তি কামনায় নানা আয়োজন করেছে। পূজা দেখতে আসা হাজারো মানুষ মন্দিরগুলোতে দাঁড়িয়ে জগৎ সংসারের মঙ্গল ও শান্তি কামনা করছেন।