চুয়াডাঙ্গায় শীতে খুব কষ্টে আছেন নদীর পাড়ের হরিজনেরা

ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জেছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন মাথাভাঙ্গা নদীর পাড়ে বসবাস করা হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা। শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে সেখানকার নারী ও শিশুদের। তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে গত ছয় থেকে সাত বছর সেখানে কোনো শীতবস্ত্র বা কম্বল দেওয়া হয়নি।

হরিজন সম্প্রদায়ের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বাঁশফোড় প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ২৪টি বাঁশফোড় ও ৪০টি ডোম পরিবারের সদস্যরা জেলায় বসবাস করেন। তাঁদের একটি বড় অংশের বসবাস সদর থানার পেছনের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে। এখানে সরকারি বা জনপ্রতিনিধিরা কেউই আসেন না, খোঁজও নেন না।

সম্প্রতি মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে হরিজন সম্প্রদায়ের এলাকায় গেলে গৃহবধূ মনা ডোম বলেন, ‘তিন লম্বর উয়াডে (ওয়ার্ড) থাকি, আমরা মেম্বার খবরই লেন না। কুনু খবর লেন না, কুনু খোঁজ লেন না। হরিজন-ডোমদের কেউই খোঁজ লেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নদীর ধারে অতিরিক্ত ছীত। কুয়াছা আছে। পুরোনো খ্যাতা আছে, লেপ আছে, উডাই গায় দিই। বেছি ছীত পড়লি ছেলেপিলেকে লিয়ে আগুন তাপায়।’

প্রবীণ সদস্য দুখু ডোম বলেন, ‘এখানে মেম্বার-চিয়ারমেনরা কিছুই দ্যায় না। ছরকারি কুনু সুবিধা পৌঁছায় না।’

শীতার্ত এসব মানুষের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে বসবাসকারী হরিজন সম্প্রদায়ের বিষয়টি প্রথম জানলাম। এসব শীতার্ত মানুষের কাছে আজই (সোমবার) আমি নিজ হাতে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেব।’

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর আজ সকালে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তবে গতকাল রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরেছে। সকাল থেকে ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে না পারায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সেই সঙ্গে উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শুক্রবার ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো ও তাপ কোনোটিই ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হচ্ছে না। ফলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তারপর কুয়াশা কমতে পারে।