রাজশাহীতে অতিথি বরণ করতে গিয়ে সংঘর্ষে বিএনপি নেতার ভাই নিহত
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির এক ইফতার অনুষ্ঠানের অতিথিকে বরণ করতে গিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব হয়। দ্বন্দ্ব গড়ায় সংঘর্ষে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময় এ ঘটনায় বিএনপির এক নেতার ভাই গুরুতর আহত হন। আজ বুধবার দুপুরের পর তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত ব্যক্তির নাম গানিউল ইসলাম। তিনি স্থানীয় পাচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতির ভাই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে কৃষ্ণপুর মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ওই ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শরীফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রভাষক মুজিবুর রহমান ও সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল গাফফার। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইফতার মাহফিল শুরুর দিকে পাচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমানের পক্ষ এবং সাবেক সভাপতি আবদুল মোমিন পক্ষের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা কৃষ্ণপুর মোড়ে প্রধান অতিথিকে বরণ করার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। তবে মোমিনের পক্ষের নেতা–কর্মীরাই প্রধান অতিথিকে বরণ করে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোমিন ও তাঁর বড় ভাই গানিউল ইসলাম এবং তাঁদের অনুসারীরা মুজিবুর রহমান ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মোর্ত্তুজার ওপরে হামলা চালান এবং লাঞ্ছিত করেন। ইফতার অনুষ্ঠানের পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুজিবুরের শত শত অনুসারী ও নেতা–কর্মী মোমিন এবং তাঁর ভাই গানিউলের ওপর হামলা চালান। এতে গানিউল গুরুতর আহত হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বুধবার দুপুরের পর মারা যান।
সূত্র জানায়, পাচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমান এবং সাবেক সভাপতি আবদুল মোমিন দুজনেই শরীফ উদ্দিনের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে আবদুল মোমিন দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আবার সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে মুজিবুর রহমানের বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। কীভাবে হামলার ঘটনা ঘটল, সেটা জানেন না বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ভেতরে ভেতরে যে এই ঘটনা ঘটে গেছে, তা বোঝাই যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শরীফ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। এই ঘটনায় কাউকে আটকও করা হয়নি।