জলদস্যুদের হানায় আতঙ্কে জেলেরা

বৃহস্পতিবার রাতে ১৫টি মাছ ধরার ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সাতটি কলাপাড়ার মহিপুর এলাকার।

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই রাত থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছেন জেলেরা। গভীর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ইতিমধ্যে তা বাজারেও এসেছে। তবে জলদস্যুদের হানায় আতঙ্কে আছেন জেলেরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্তত ১৫টি মাছ ধরার ট্রলারে হামলা হয়েছে। মাছ, ডিজেলসহ মালামাল লুট করে জলদস্যুরা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ১৫টি মাছ ধরার ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। এর মধ্যে সাতটি তাঁদের এলাকার। অন্তত কোটি টাকার মাছ, জ্বালানি, যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে গেছে দস্যুরা। ইলিশের মৌসুমের শুরুতেই সাগরে দস্যুদের হানায়, জেলেরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ইলিশের মৌসুমে মৎস্য বন্দরের অনেক ব্যবসায়ী আগাম দাদন দেন জেলেদের। সাগরে ইলিশ শিকার করে নির্দিষ্ট আড়তে বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করেন জেলেরা। জলদস্যুদের উৎপাতে রোধ কর করতে না পারলে জেলেদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার রাতে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিলেন মহিপুর এলাকার ইউসুফ ফকিরের এফভি মা-বাবার দোয়া নামের মাছ ধরার ট্রলারের মাঝি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের ট্রলারের ধাক্কায় ডুবে যায় আমার ট্রলারটি। আমার সঙ্গে ১২ জন জেলে ছিলেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর আমাদের উদ্ধার করেন অন্য জেলেরা।’

শফিকুল আরও বলেন, গত বছর মাছ তেমন ধরা পড়েনি। নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন সাগরে মাছ ধরা পড়ছে। ইলিশের মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা দস্যুদের আতঙ্কে ভুগছেন।

গত শনিবার মহিপুর মৎস্য বন্দরে গিয়ে জলদস্যুদের হামলার শিকার জেলেদের সঙ্গে কথা হয়। এফবি তাবিম ট্রলারর মাঝি লাল চাঁন বলেন, গত বছর ইলিশের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। এ কারণে অনেক জেলেই গভীর সাগরে যেতে পারেননি। তাই ইলিশ শিকারও কম হয়েছে। এ বছর ইলিশের আকার বড় ও গভীর সাগরে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সাগরে দস্যুদের উৎপাতে ইলিশ শিকারে সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

আরেক জেলে নেছার মাঝি বলেন, ‘সাগরে ইলিশ শিকার করেই চলে আমাদের সংসার। কিন্তু জলদস্যুদের কারণে এখন সাগরে নামতেই আতঙ্ক। সাগরে জলদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ করতে পারলেই জেলেরা নিরাপদে সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে পারবেন।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালীতে ৪৮ হাজার ৩৯৮ জন জেলে রয়েছেন, যাঁরা সাগরে ইলিশ শিকার করেন। এ বছর ইলিশের মৌসুমে সাগরে দস্যুদের হানার খবর পেয়েছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করেন তিনি।

র‌্যাব-৮–এর পটুয়াখালীর কোম্পানি অধিনায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, মহিপুরে গিয়ে দস্যুদের কবলে পড়া জেলেদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। র‌্যাব সদস্যরা দস্যুদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।