দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বগুড়ার ধুনটে ১৪৪ ধারা জারি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার ধুনট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুই দিন আগে একই স্থানে এবং একই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বান করায় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আজ সোমবার বেলা ২টার দিকে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক খান এ আদেশ জারি করেন।

আজ বেলা ৩টায় উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের জোড় শিমুল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বান করায় সেখানে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাবেশ স্থলের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা করা হয়েছে।

৫ জুন ধুনট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল হাই খোকন (মোটরসাইকেল প্রতীক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান টি আই এম নুরুন্নবী তারিক (ঘোড়া প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল (আনারস প্রতীক)।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই খোকন আজ বেলা ৩টায় চিকাশি ইউনিয়নের জোড় শিমুল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী সমাবেশ আহ্বান করে প্রথমে মাইকিং ও প্রচারণা চালান। একই সময়ে একই স্থানে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিকও পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করেন। আহ্বানকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এতে করে ইউএনও আশিক খান জোড় শিমুল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ১৪৪ ধারা নোটিশ জারি করেন।

বর্তমান চেয়ারম্যান ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই খোকন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী টি আই এম নুরুন্নবী তারিক আজ একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বান করেন।

ইউএনও আশিক খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৪৪ ধারা জারি করা এলাকায় আজ বেলা দুইটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাঁচ বা ততধিক ব্যক্তির সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিস্ফোরক দ্রব্য ও লাঠি বহন এবং উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ থাকবে।

ইউএনও আশিক খান বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী একই স্থানে এবং একই সময় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বান করেছেন। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই খোকন বলেন, ‘জোড় শিমুল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজকের সমাবেশ আয়োজনে গত ৩০ মে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নেওয়া হয়। গতকাল রোববার সমাবেশের কথা জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করে মাইকিং শুরু করেন। মোটরসাইকেলের জোয়ার দেখে ভীত হয়ে সমাবেশ বানচালের ষড়যন্ত্র করেছেন।’

অন্যদিকে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী টি আই এম নুরুন্নবী তারিক বলেন, ‘আমার কর্মীরাই সেখানে আগে সমাবেশ আহ্বান করেছেন। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।’

আগের রাতে দুজন আহত

এর আগে গতকাল রাতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক সমর্থকের হাত থেকে আঙুল বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল রাত ১১টার দিকে ধুনট পৌরসভার জিঞ্জিরতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক রাব্বি ইসলাম ও ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক সানাউল্লাহ।

পুলিশ জানায়, গতকাল রাত ১১টার দিকে ধুনট পৌরসভার জিঞ্জিরতলা এলাকায় আবদুল হাই খোকনের (মোটরসাইকেলের প্রতীক) কর্মীরা প্রচার চালাতে যান। সেখানে নুরুন্নবী তারিকের (ঘোড়া প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে মোটরসাইকেলের সমর্থক রাব্বি ইসলাম গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া ধারালো অস্ত্রের কোপে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক সানাউল্লাহর বাম হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

আহত দুজনকে প্রথমে ধনুট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে সানাউল্লাহর অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাব্বিকে ধুনট সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

আহত রাব্বি অভিযোগ করেন, মোটরসাইকেলে ভোট চাইতে গেলে সানাউল্লাহর নেতৃত্বে ঘোড়া প্রতীকের কর্মীরা তাঁর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান। অন্যদিকে আহত সানাউল্লাহ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকেরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করেছেন।