খুলনার যে হোটেলে রান্না মাংস বিক্রি হয় ওজনে

খুলনায় ভিন্নধর্মী এক হোটেল চালু করেছেন মো. হিজবুল্লাহ নামের একজন, যেখানে রান্না মাংস ওজন করে বিক্রি হয়ছবি: প্রথম আলো

মাটির হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে গরুর মাংস। পানি ছাড়া শর্ষের তেল দিয়ে রান্না করা ওই মাংস বিক্রি হচ্ছে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ওজন করে। যার যতটুকু প্রয়োজন, তিনি ততটুকুই নিতে পারছেন। কেনা মাংস খেতে না পারলে আবার ফেরতও দেওয়া যাচ্ছে। ফেরত দেওয়া মাংস আবার ওজন করে দাম কেটে রাখা হচ্ছে।

মাংস পরিবেশনেও কিছুটা ভিন্নতা আছে। মাটির বাসনে করে দেওয়া হয় মাংস। মাংস রাখা বাসনের নিচে থাকে আরেকটি মাটির বাসন। তাতে থাকে কয়লার আগুন। মাংস যখন দেওয়া হয়, তখন আগুনে মাংস থাকে বেশ গরম; একেবারে চুলা থেকে হাঁড়ি নামানোর মতো। এতে মাংসের স্বাদ থাকে অটুট। রান্না করা হয় কাঠের চুলায় হাঁড়ির দমবন্ধ রেখে।

খুলনায় ভিন্নধর্মী এই হোটেল চালু করেছেন মো. হিজবুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। হোটেলের নাম দিয়েছেন ‘খুলনা কিচেন’। নগরের খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের (মন্নুজান স্কুল) পাশে ছোট বয়রা মেইন রোড এলাকায় হোটেলটি অবস্থিত। নগরের বেশ খানিকটা ভেতরে নিরিবিলি এলাকায় হলেও প্রতিদিনই শত শত মানুষ আসছেন মাংসের স্বাদ নিতে। গত নভেম্বরের শেষের দিকে হোটেলটি চালু করেছেন হিজবুল্লাহ। এখন তাঁর হোটেলে সাতজন কর্মচারী কাজ করেন। বাইরের ধুলা ও ময়লা যেন হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য হোটেলের সামনে নেট দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। ওই হোটেলে শুধু গরুর মাংসই বিক্রি হয়। রান্না করা প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা।

ওজন করে মাংস বিক্রির ব্যাপারে হিজবুল্লাহ বলেন, তিনি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। গরুর মাংস না খেতে পারার আক্ষেপটা জানেন। সেই চিন্তা থেকেই মাংস ওজন করে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন। একজন দিনমজুর থেকে শুরু করে ধনী-গরিব—সবাই যার যার চাহিদা অনুযায়ী যেন মাংস কিনে খেতে পারেন, সে জন্য এমন উদ্যোগ তাঁর। তাঁর ওই হোটেলে এক প্লেট ভাতসহ সর্বনিম্ন ৭০ টাকায় গরুর মাংসের স্বাদ নিতে পারেন যে কেউ।

২০১৫ সালে খুলনা নিউমার্কেটের বাইতুল নুর মসজিদের পাশে ‘ফুড গার্ডেন’ নামের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট করেছিলেন হিজবুল্লাহ। করোনার সময় লোকসান হওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এরপর মাটির হাঁড়িতে গরুর মাংস রান্না করার পরিকল্পনা করেন তিনি। গরুর মাংসের পাশাপাশি খাসির মাংসও রান্নার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

সম্প্রতি এক দুপুরে ওই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরে বেশ কয়েকটি মাঝারি আকারের মাটির হাঁড়ি পরপর থাকা চুলায় বসানো। হাঁড়ির গরম ভাপ যাতে বের না হতে পারে, সে জন্য হাঁড়িগুলোর মুখ আটকে দেওয়া। রান্না হচ্ছে কাঠের চুলায়। যে হাঁড়ির মাংস রান্না হচ্ছে, সেটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সামনে। সেখানে একজন হাঁড়ি থেকে মাংস তুলে ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্রের ওপর রাখা বাসনে রাখছেন। ক্রেতা যেভাবে কিনতে চাইছেন, সেভাবেই দেওয়া হচ্ছে মাংস।

এই হোটেলে খেতে এসেছিলেন সোনাডাঙ্গা এলাকার বশির হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাংসের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাটির হাঁড়ি ও কাঠের চুলায় রান্না হওয়ায় মাংসের স্বাদ যেন বেড়ে গেছে! সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, নিজের পছন্দমতো মাংস কিনে খেতে পারছি।’