ময়মনসিংহে প্রথম আলোর কর্মীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়

প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক ডটকম

ময়মনসিংহে কর্মরত প্রথম আলোর কর্মীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেছে একটি চক্র। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার শিকার আবুল বাশার প্রথম আলোর ময়মনসিংহ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (সার্কুলেশন) হিসেবে প্রায় ১৫ বছর ধরে কর্মরত। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ শহরে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শেষে নিজ বাসা গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ময়মনসিংহের দিঘারকান্দা বাইপাস মোড়ে অপরিচিত তিন যুবক তাঁর কাছে যান।

তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫–এর মধ্যে হবে। তাঁদের মধ্যে দুজন আবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি প্রথম আলোতে চাকরি করেন কি না, জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা পত্রিকা কেনার বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। পত্রিকা কেনা নিয়ে সামনের প্রাইভেট কারে বসা একজন কথা বলবেন বলে সেখানে নিয়ে যান চক্রের তিন সদস্য।

সেখানে প্রাইভেট কারের দরজা খুলে কথা বলার কৌশলে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। প্রাইভেট কারের ভেতরে তখন চালক ছাড়া এক ব্যক্তি পেছনের সিটে ছিলেন। বাশারকে প্রাইভেট কারের কাছে নিয়ে যাওয়া তিনজনের দুজন প্রাইভেট কারে উঠলেও একজন ঘটনাস্থলে থেকে যান।

আবুল বাশার বলেন, সাদা রঙের প্রাইভেট কারে তুলে তাঁর চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে দুর্বৃত্তরা। সঙ্গে থাকা মাফলার দিয়ে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করা হয়। লোহার কোনো বস্তু দিয়ে হাত, পা, হাঁটু, মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন তাঁরা। মারধরের একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা যুবকদের দলটি বলতে থাকে, ‘বসের অর্ডার তোরে মাইরা ফালানোর। বেশি বাইরা গেছস তোরা।’

আবুল বাশার বলেন, এরপর দুর্বৃত্তরা তাঁর পকেট ও ব্যাগ তল্লাশি করে। পকেটে থাকা মানিব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে ব্যাংকের এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র, মানিব্যাগে থাকা ১৫ হাজার ৭০০ টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে নেয়। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড এবং বিকাশ ও নগদের পাসওয়ার্ড নিলেও তাতে কোনো টাকা না থাকায় আবার মারধর করে। একপর্যায়ে তারা বলতে থাকে, ‘তুই প্রাণে বাঁচতে চাইলে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হইবে। না অইলে বসের অর্ডার অনুযায়ী তোরে মাইরা ফালবাম, কিডনি নিয়ে নিবাম।’ একপর্যায়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চূড়ান্ত করে দুর্বৃত্তরা।

দুর্বৃত্তরা পরে আবুল বাশারের শ্যালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, রাত ৮টা ৩৪ মিনিট থেকে ৯টা ২৩ মিনিটের মধ্যে দুটি বিকাশ ও দুটি নগদ নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এর নম্বরগুলোতে মোট ৯টি নম্বর থেকে ২ লাখ টাকা পাঠানো হয়।

আবুল বাশার বলেন, মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা পাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের চেলেরঘাট বেইলি ব্রিজের পাশে তাঁকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। টাকা পাওয়ার পর তাঁরা বলতে থাকেন, রাতে কাউকে জানালে প্রাণে বাঁচতে পারবেন না তিনি। একজন ইজিবাইকচালক তাঁকে উদ্ধার করে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে ময়মনসিংহগামী বাসে তুলে দেন। হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন তিনি। কারা, কী কারণে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ শুরু করেছি। প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।