নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষকদের মানববন্ধন

নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা এবং তাঁদের সম্পত্তি লুটপাটের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা এবং তাঁদের সম্পত্তি লুটপাটের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়।

গত শুক্রবার বিকেলে নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়া এলাকায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তি করে আকাশ সাহা নামের এক তরুণ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু লোক দিঘলিয়া বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকানপাট ও আশপাশের বাড়িঘরে হামলা চালায়। অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা চালানো হয় মন্দিরে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করে ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর আগে গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করা হয়।

মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে লড়াই করেছে এ দেশের মানুষ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে আমরা কাজ করতে পারছি না। বাংলাদেশে বিশেষত ১৯৭৫–এর পর থেকে রাজনীতিতে একটা সাম্প্রদায়িক দল লালিতপালিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা না দিতে পারা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জাজনক।’

সাম্প্রদায়িক হামলা রোধে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, হয় সরকারদলীয় লোকেরা এসব করছেন অথবা তাঁদের ইন্ধনে ঘটনাগুলো ঘটছে। সরকারকে এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

হামলাকারী ও হামলায় ইন্ধনদাতাদের বের করার আহ্বান জানিয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক ধর্মের মানুষ সে যদি নিজের ধর্ম মানে তাহলে সে অন্য ধর্মের মানুষের ওপর আক্রমণ করতে পারে না। আমরা কথায়–কথায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র দাবি করি, আসলে কতটা নিরপেক্ষ, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। একের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েই যাচ্ছে। কারা হামলা করছে, তাঁদের পেছনে ইন্ধন কারা দিচ্ছে, তা তদন্ত করা হোক, তাঁদের বের করে বিচার করা হোক এবং জাতির সামনে তাঁদের চেহারা উন্মোচন হোক।’

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমরা সবার আগে বাঙালি তারপর আমাদের ধর্ম। কখনোই ধর্ম আমাদের বাঙালি পরিচয়ের আগে হতে পারে না। একের পর এক হামলা, লুটপাটের পর দেখা যায় প্রশাসন প্রায় নিশ্চুপ থাকে। প্রশাসনের ভেতরেই অনেক সাম্প্রদায়িকতা ঘাপটি মেরে আছে। তাঁদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক।’

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদা আক্তার প্রমুখ।