৩ দিনের শিশুকে নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসে অসুস্থ মা

এসএসসি পরীক্ষা
প্রতীকী ছবি

তিন দিনের শিশুসন্তান নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বৃষ্টি আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী। আজ রোববার কলমাকান্দা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে বৃষ্টি পরীক্ষা দিতে যায়। সন্তানকে সে বাইরে এক আত্মীয় কোলে রেখে যায়। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তাকে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে কলমাকান্দা উপজেলা সদরের ঘোষপাড়া এলাকার বৃষ্টি আক্তারের (১৬) সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট এলাকার মো. শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। তখন সে কলমাকান্দা পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী ছিল। বিয়ের পর সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কয়েক মাস আগে বৃষ্টি বাবার বাড়িতে চলে আসে। গত বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে সে কলমাকান্দা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রথম পরীক্ষা শেষে তার প্রসব বেদনা ওঠে। পরে নেত্রকোনা শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় সে।

আজ সকালে বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে বৃষ্টি ওই ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা হলে যায়। হলের বাইরে এক আত্মীয়ের কাছে তার সন্তান ছিল। পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা পর সে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাকে নিয়ে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বৃষ্টি আক্তারের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় শেষপর্যায়ে গিয়ে বৃষ্টি অসুস্থ হয়ে যায়। পরে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ইজিবাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন একটু সুস্থ। বৃষ্টিকে লুকিয়ে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়েছিল। তবে এভাবে বাল্যবিবাহ দেওয়া ঠিক হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই শিশুর মাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান হওয়া ও অস্ত্রোপচার করার পর বিশ্রাম না নেওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে।

আরও পড়ুন

কলমাকান্দা পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব আবুল কালাম মোহাম্মদ এমদাদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি আক্তার কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের একজন পরীক্ষার্থী। আজ ছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্রের লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগে সে তার তিন দিনের শিশুসন্তান নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে। মানবিক কারণে পরীক্ষার সব নিয়ম মেনে শিশুটির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া কেন্দ্রে একটি চিকিৎসা দল রয়েছে। পরীক্ষার দুই ঘণ্টা পর বৃষ্টি অসুস্থতা বোধ করলে তাকে চিকিৎসা দল সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। অপ্রাপ্ত অবস্থায় বৃষ্টির বিয়ে নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোপনে হয়তো তার পরিবারের লোকজন এ বিয়ে দিয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আজকেই বিষয়টি জেনেছি।’