পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে চেয়ারম্যানদের সুবিধা বন্ধের হুমকি এমপি নাবিলের

যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ারের সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুলের পক্ষে কাজ না করলে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে।

আজ সোমবার বিকেলে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার লিখিতভাবে এসব অভিযোগ করেন। এর আগে একই দিন লিখিতভাবে এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন ফাতেমা আনোয়ার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি। এ ঘটনায় খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।  

তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো ইউপি চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি ফাতেমা আনোয়ারের সঙ্গে নেই। একজন চেয়ারম্যানও এমন অভিযোগ করেননি। নয়জন চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে ভোট করছেন। একজন চেয়ারম্যানও তাঁর সঙ্গে নেই। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে যশোর সদর উপজেলা নির্বাচন। ফাতেমা আনোয়ার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে ফাতেমা আনোয়ার বলেন, গত ২৭ এপ্রিল ও ১১ মে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তাঁর বাসভবনের কার্যালয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও নেতা-কর্মীদের ডেকে বলেছেন, আমি আরও চার বছর এমপি থাকব। চেয়ারম্যানরা তাঁর প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের পক্ষে ভোট না করলে সরকারি আর্থিক সুবিধা যেমন ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করবেন।

বিষয়টি তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুজন সাত্তার ও একান্ত সহকারী পলাশকে দিয়ে তদারকি করছেন। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের পদ-পদবি হারানোর ভয়ভীতিও দেখাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করছেন, যাতে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে।

ফাতেমা আনোয়ার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন না বলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও যশোর সদর (যশোর-৩) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। আনোয়ারকে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে কাজী নাবিল উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মী, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তাঁর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তাঁর মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ না করলে দলীয় পদ হারানোসহ বিভিন্ন সরকারি আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে নাবিল আহমেদ জানিয়েছেন।

ফাতেমা আনোয়ার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন তাঁর পক্ষের কিশোর গ্যাং ও তাদের গডফাদারদের দ্বারা বিভিন্ন এলাকায় পেশিশক্তি প্রদর্শন করছে। বিশেষ করে জেলা শ্রমিক লীগের নেতা সেলিম রেজা ও তাঁর অনুসারীরা বিগত ইউপি নির্বাচনের ন্যায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার কর্মী- সমর্থকদের হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজু ও তাঁর অনুসারীরাও একইভাবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন।

এদিকে কাজী নাবিল আহমেদ বিভিন্ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার দিন ও সময় চূড়ান্ত করেছেন। এ ছাড়া এমপির মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারের প্রচারণার নামে আমার ঘোড়া প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি, মিথ্যা অপপ্রচার ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার কর্মী-সমর্থকদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। এমন পরিস্থিতি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।  

কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ (সদর) আসনের টানা তিনবারের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য।

নেতা-কর্মীরা জানান, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল। ফাতেমা আনোয়ার কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার যুবলীগের নেতা তৌহিদ চাকলাদারকে সমর্থন দিয়েছেন। শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই তৌহিদ। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। নাবিলের সমর্থন না পাওয়ায় নাবিল অংশের কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে নিজের মতো নির্বাচন করছেন ফাতেমা আনোয়ার।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ফাতেমা আনোয়ার কিছু অভিযোগ করেছেন। সব অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু ফাতেমা আনোয়ার না; সব প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’