সংস্কারের দুই বছরেই সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী

কালীগঞ্জ পৌরসভার নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মুরগীহাটা পর্যন্ত সড়কটি দুই বছর আগে সংস্কার করা হয়। সংস্কারকাজে অনিয়ম হওয়ায় সড়কটি ভেঙে গেছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মুরগিহাট ৪৫০ মিটার পাকা সড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পানি জমে আছে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার একটি সড়ক সংস্কারের দুই বছরের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের কমপক্ষে ১০টি স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মুরগীহাটা পর্যন্ত ৪৫০ মিটার দীর্ঘ সড়ক মেরামতের জন্য দুই বছর আগে ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ঠিকাদার সংস্কারকাজে অনিয়ম করায় সড়কটি এখন বেহাল।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কালীগঞ্জ বাজার থেকে প্রধান বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে সড়কের পুরোনো সেতুটি মেরামতের কাজ চলছে। যে কারণে ওই সড়ক বন্ধ রয়েছে। ফলে মূল বাজার থেকে নিমতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি বর্তমানে যান চলাচলের একমাত্র সড়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই সড়কের এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মূল বাজারের প্রবেশে চারটি প্রধান সড়ক রয়েছে। আর এই মূল বাজার এলাকায় বেশির ভাগ সড়ক সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন। মূল বাজার থেকে একটি সড়ক দক্ষিণে বের হয়ে প্রধান বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেছে। আরেকটি সড়ক পূর্বে বের হয়ে মাগুরার আড়পাড়ার দিকে চলে গেছে। এটি উত্তরে মুরগীহাটা হয়ে কলেজের মোড়ে মিশেছে। এগুলো সবই সড়ক বিভাগের। তারা তিন বছর আগে এগুলো সংস্কার করেছে। এখনো সড়কগুলো ব্যবহারের উপযোগী রয়েছে। শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে থানার সামনে দিয়ে মুরগীহাটা পর্যন্ত সড়কটি পৌরসভার। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫০ মিটার। দুই বছর আগে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার নিয়োগ করে এই সড়ক সংস্কার করেছে। কিন্তু ভেঙেচুরে যাওয়ায় এটি আবার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কটি মেরামতের জন্য ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি পেয়েছিল ঝিনাইদহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শহর এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু কাজটি করেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার আতিয়ার রহমান। ২০১৯ সালে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও করোনার কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২০ সালের শেষ সময়ে কাজটি শেষ করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে কিছুটা বৃদ্ধি করে এক ইঞ্চি পাথর দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।

কালীগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, ‘কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর থেকেই সড়কের বিভিন্ন স্থানের পিচঢালাই উঠতে শুরু করে। গত দুই বছরে সেগুলো  বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এই সড়কের পশ্চিম মাথায় সড়ক বিভাগ কাজ করেছে, তাদের রাস্তা আর এই রাস্তা দেখলে বোঝা যায়, এই কাজে কতটুকু অনিয়ম করা হয়েছে।’

আবদুল লতিফ আরও বলেন, তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সড়কটির ওপরের অংশ খুঁড়ে ফেলে পুনরায় এক ইঞ্চি কার্পেটিং করার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদার সেভাবে করেননি। নামমাত্র কার্পেটিং করে চলে গেছেন। এই কারণে অল্প দিনেই উঠে যেতে শুরু করে। এভাবে সড়ক সংস্কার করে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইজিবাইকের চালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শহরের মাঝ দিয়ে যাওয়া প্রধান সড়কের সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। এতে ওই সড়ক বন্ধ রয়েছে। এই সড়ক দিয়েই তাঁদের চলতে হচ্ছে। কিন্তু সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে চলাচল করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে পথচারীরা যানবাহনকে পাশ কাটাতে গিয়ে গর্তে পড়ছেন।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কাজটি নিয়মমাফিকই করা হয়েছিল। কিন্তু কালীগঞ্জ শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ থাকায় এই সড়কে চাপ বেশি পড়েছে। যে কারণে দ্রুত নষ্ট হয়েছে। তবে ঠিকাদার এখনো সম্পূর্ণ বিল পাননি, তাঁকে বলা হয়েছে দ্রুত সংস্কার করতে।

ঠিকাদার আতিয়ার রহমান জানান, তাঁরা ঠিকমতো কাজ করেছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এই অবস্থা হয়েছে। তাঁরা এখনো সম্পূর্ণ বিল নেননি। সংস্কারকাজ শেষ করে বাকি বিল নেবেন।