রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগরে মিছিল
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সোমবার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। রাজশাহী ও কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই মিছিল বের করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে মশালমিছিল করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অতর্কিত হামলাসহ দেশব্যাপী চালানো তাণ্ডবের প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মশালমিছিল বের করা হয়। ‘গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে বের হওয়া মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ মিলে অরাজকতার সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে আজকে আমরা দেখলাম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলছেন তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো ডকুমেন্ট (নথি) নেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর এ রকম বক্তব্য আমাদের মনে সন্দেহ তৈরি করছে। কিন্তু আমরা বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই আর আওয়ামী লীগকে গ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগ যদি ফিরে আসার চেষ্টা করে, আমরা প্রয়োজনে আরও একবার গণ–অভ্যুত্থানের ডাক দেব।’
সদ্য ঘোষিত ‘গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির হওয়া উচিত নিরপেক্ষ, কিন্তু আজকে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তিনি যদি অতিসত্বর পদত্যাগ না করেন, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব।’
রাজশাহীতে আজ বিকেল চারটার দিকে সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সড়ক ঘুরে সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে এসে সমাবেশ করে। সেখানে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনি আছেন। ৫ আগস্টের বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে হাসিনা তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। দুই মাস যেতে না যেতেই এখন এমন এক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এই বক্তব্য দেওয়া মানে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা। আমরা চাই অনতিবিলম্বে তাঁকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করানো হোক এবং তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বিচারের আওতায় আনা হোক।’
কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা থেকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে মশালমিছিল বের করা হয়, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের সমন্বয়ক অভি চৌধুরী ও ইকরাম হোসেন।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সমন্বয়ক অভি চৌধুরী বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জাতির সঙ্গে চরম মিথ্যাচার করেছেন। তাই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে মশালমিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
একই দাবিতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরেও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]