নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি, ভোগান্তিতে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ৮ জুনের পর থেকে টেকনাফের কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিন জেটি ঘাটের উদ্দেশে কোনো যাত্রীবাহী নৌযান ছেড়ে যায়নি। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ থেকে বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও উত্তাল সাগরে দুর্ঘটনা ঝুঁকি ও নিরাপত্তার শঙ্কায় সাগরপথটিতে নৌযান চলাচল করছে না। এতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে।
টেকনাফের কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকার পাশ দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যেতে হয়। নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ৮ জুন বাংলাদেশের একটি পণ্যবাহী ট্রলার লক্ষ্য করে ৩০-৪০টি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত না হলেও নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাতটি গুলি এসে লাগে ট্রলারে। এরপর ওই নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে ৫ জুনও একই এলাকায় একটি ট্রলারে গুলি করা হয়েছিল। নির্বাচনী সরঞ্জামসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ওই ট্রলারে সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরছিলেন। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ওই ট্রলারে এসে লাগলেও যাত্রীরা রক্ষা পান।
কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতে নিরাপত্তার শঙ্কা দেওয়ায় পরে বিকল্প পথ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কায়ুকখালীয়া ঘাটের পরিবর্তে শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চর থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল শুরু হয়। তবে নৌযানমালিকদের দাবি, সাগরপথটি খুবই উত্তাল। এ ছাড়া এই পথের গোলগরা নামক এলাকায়ও নৌযান লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা ঘটছে। এ কারণে নৌযান চালানো সম্ভব নয়। বিকল্প পথটিতে ১১ জুন রোগীবাহী একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে ১০-১২টি গুলি ছোড়া হয়।
সাবরাং ইউনয়নের মুন্ডার ডেইল ও ঘোলারচর থেকে ১২ জুন তিনটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক যাত্রী শাহপরীর দ্বীপ হয়ে সেন্ট মার্টিনে যান। একইভাবে সেন্ট মার্টিন থেকে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে টেকনাফ সদরে ফেরেন তিন শতাধিক মানুষ। পরদিন ১৪ জুন কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ২০০ টন খাদ্য ও ১৫০ যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে যায় জাহাজ এমভি বার আউলিয়া। এর পর থেকে ওই পথেও নৌযান চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে রয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খাল ঘাট দিয়ে সেন্ট মার্টিনে চলাচল করে ২৭টি ট্রলার ও ৪৫টি স্পিডবোট। আজ শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটে ট্রলার ও স্পিডবোট নোঙর করে রাখা হয়েছে। পাশে শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার। ঘাটের টিকিট কাউন্টারে কেউ নেই।
ঘাটে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল আমিন ও দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ‘নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্ট মার্টিনে ফিরতে পারছি না। টেকনাফ পৌরসভায় বোনের বাড়িতে অবস্থান করছি। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে প্রতিদিনই ঘাটে এসে খোঁজখবর নিলেও কবে ট্রলার চলবে, তাঁর কোনো সদুত্তর মিলছে না।’
জানতে চাইলে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, নাফ নদীর বিকল্প হিসেবে শাহপরীর দ্বীপ এলাকার গোলগরা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও ওই এলাকায় নৌযান ভেড়ানোর মতো কোনো সুব্যবস্থা নেই। উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ওই রুটে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্ট মার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে নাফ নদীর বদর মোকাম এলাকায় কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে বদরমোকাম এলাকায় ডুবোচর জেগে ওঠায় খনন করাও জরুরি।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’