মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যুবকের মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কাজী সোহেল (৩৪) নামের ওই যুবকের পরিবারের দাবি, নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের নির্যাতনে তিনি মারা গেছেন। যদিও প্রতিষ্ঠানের লোকজনের দাবি, সোহেল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
আজ শুক্রবার নগরের ঢুলিপাড়ায় অবস্থিত নিউ যত্ন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। বিকেলে ওই যুবক মারা গেলেও বিষয়টি জানাজানি হয় সন্ধ্যার পর। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মৃত রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মীদের হাতাহাতি হয়। এ সময় নিরাময় কেন্দ্রে ভাঙচুর করা হয়। রাত ৯টার দিকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক সাগর আবদুল্লাহসহ কর্মীরা পালিয়ে যান। এ সময় সেখানে থাকা প্রায় ৮০ জন রোগীও পালিয়ে গেছেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উৎসুক জনতার কারণে লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের পর যুবকের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তাঁরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
মৃত সোহেলের বাড়ি জেলার বরুড়া উপজেলার লতিফপুর এলাকায়। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ওই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
সোহেলের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, চিকিৎসার নামে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের জানানো হয় সোহেলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাঁরা এসে অবস্থা দেখে বুঝতে পারেন সোহেলকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা সোহেলের স্বজন মো. হাবিব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জানানো হয় সোহেল ফাঁসি দিয়েছে। কিন্তু আসার পর তারা আমাদের ঢুকতে দিচ্ছিল না। বরং আমাদের লোকজনদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের পরিবারের নারী সদস্যদের গায়ে হাত তুলেছে। নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি থাকা কয়েকজন বলেছে সোহেলকে নির্যাতন করা হয়েছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রটির পরিচালক সাগর আবদুল্লাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের পর সবাই যখন ঘুমে ছিল তখন চারতলার একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীকে কোনো নির্যাতন করিনি। বরং রোগীর স্বজনেরা স্থানীয় কিছু লোক নিয়ে সেন্টারে হামলা চালিয়েছে। আমার অফিস ভাঙচুর করেছে। আমাকে মারধর করেছে।’
রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, রাত ৯টার দিকে রোগীর স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ কর্মীরা পালিয়ে যান। এই সুযোগে রোগীরাও পালিয়ে গেছেন। স্থানীয় লোকজন নিরাময় কেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যান।