সড়ক-ফুটপাতে ইট–বালু, চলাচলে দুর্ভোগ

এর আগে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীসহ মালামাল জব্দও করা হয়েছিল।

ফুটপাতের ওপর ইট ও বালু রাখা হয়েছে। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল রংপুর নগরের কলেজ রোডের খামারপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রংপুর নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এর ফুটপাতের ওপর নির্মাণসামগ্রী ইট, বালু ও পাথর স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এমনকি কিছু সড়ক ও ফুটপাতে গরু বেঁধে রাখা হচ্ছে। এতে রাস্তা সরু হয়ে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। পথচারীরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চলাচলের উপযোগী সড়কগুলো প্রশস্ত করা হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় সড়ক ও ফুটপাতের ওপর বিক্রির জন্য ইট ও বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় বাসাবাড়ির নির্মাণসামগ্রী বালু ও ইট ফেলে রাখা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয়। তখন কয়েক দিন সড়কগুলোর অবস্থা ভালো থাকে। কিছুদিন পর আগের অবস্থায় ফিরে যায় সড়কের দৃশ্য।

এ সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, সড়কে মালামাল ফেলে রাখা আগের থেকে এখন অনেক বেশি হয়েছে। এর ফলে নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে সিটি করপোরেশনকেই এগিয়ে আসতে হবে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নগরের ব্যস্ততম ৬টি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়ক ও ফুটপাতের ওপর নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। শহরের কলেজ রোডটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এটি কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় ১০টি পাড়ামহল্লার নাগরিকদের চলাচলের একমাত্র পথ।

শহরের খামারপাড়া এলাকায় প্রধান সড়ক ও ফুটপাতে কয়েকটি গরু বেঁধে রাখার পাশাপাশি ফুটপাতে বিক্রির জন্য বালু ও ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের হাঁটার পথ অনেকটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঘুরে–ফিরে হাঁটাচলা করে থাকেন। এই এলাকায় কয়েক শ আবাসিক মেসও রয়েছে।

কারমাইকেল কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহীনুর রহমান বলেন, ‘খামার এলাকা থেকে প্রতিদিন হেঁটে কলেজে যাওয়া-আসা করে থাকি। কিন্তু খামার এলাকা থেকে লালবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কের পাশে এবং ফুটপাতে ইট–বালু তো থাকেই। তার ওপর গরুও বেঁধে রাখা হয়। দুর্ভোগ নিয়েই চলতে হচ্ছে।’

খামার এলাকার বাসিন্দা মানিক মোহন্ত নামের এক ব্যক্তি সড়কের পাশে গরু বেঁধে রাখাসহ ইট–বালু স্তূপ করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বাড়িতে তেমন জায়গা না থাকায় এখানে ইট–বালু রেখেছি। তবে এসব অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’

শহরের কেরানীপাড়া চারমাথা মোড় থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত গুরত্বপূর্ণ সড়কের পাশে দুই স্থানে নির্মাণসামগ্রী ইট–বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এই পথে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক মহব্বত হোসেন বলেন, ‘সড়ক চওড়া (প্রশস্ত) করে লাভ কী হইল। এভাবে যদি মালামাল রাস্তার মধ্যে রাখে, তাহলে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয়।’

এই এলাকার নির্মাণসামগ্রীর মালিক সুমন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ছাড়া নগরের কটকিপাড়া এলাকায় একাধিক স্থানে সড়কের মধ্যে বালু স্তূপ করে রাখার ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে আছে। এই সড়কে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। বালুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়েন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, এর আগে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীসহ মালামাল জব্দও করা হয়েছিল। সড়ক চলাচল স্বাভাবিক করতে খুব শিগগির নতুন করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রাস্তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে না রাখার জন্য শিগগিরই মাইকযোগে প্রচারণা চলানো হবে। কেউ যদি মালামাল অপসারণ না করেন, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।