উদ্বোধনের আগেই ৩৩ লাখ টাকার কালভার্টে ভাঙন
ওসমানাবাদ সড়কের করমুর ছড়া খালের ওপর নির্মিত এই কালভার্টের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং প্রস্থ ১২ ফুট। দুই সপ্তাহ আগে কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫১ টাকা।
নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। অথচ এরই মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে ৩৩ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত একটি কালভার্টে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে ঘটেছে এমন ঘটনা। চরম্বা ইউনিয়নের নোয়ারবিলা ও রাজঘাটা এলাকার সীমান্তে ওসমানাবাদ সড়কের করমুর ছড়া খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই কালভার্ট।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে তিন মাস আগে এই বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কালভার্টটির দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং প্রস্থ ১২ ফুট। দুই সপ্তাহ আগে কালভার্টটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫১ টাকা।
কালভার্টটির নির্মাণকাজ পরিচালনার দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মা এন্টারপ্রাইজ। তবে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন স্থানীয় ঠিকাদার ও চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিন।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে ৩ কিলোমিটার উত্তরে বার আউলিয়া গেট। সেখান থেকে বার আউলিয়া সড়ক ধরে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে গেলেই চরম্বা নাফারটিলা বাজার। সেখান থেকে আরও ৪০০ মিটার উত্তরে গিয়ে ডানে কওমি মাদ্রাসা রোড নামে পরিচিত একটি গ্রামীণ সরু সড়ক। সেটি ধরে ৫০০ মিটার পূর্বে গেলেই ওসমানাবাদ সড়কের শুরুতে সদ্য নির্মিত কালভার্টটি চোখে পড়ে।
কালভার্টটি নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হোক
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালভার্টটির উত্তর পাশের প্রতিরক্ষাদেয়ালসহ পিলারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই অংশ সংযোগ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। সরেজমিনে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, নির্মাণকাজ শেষ করার পর গত মঙ্গলবার দুই পাশে মাটি ভরাট করে সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হয় কালভার্টটি। এ সময় মাটির চাপে কালভার্টটির উত্তর পাশের পিলার ও প্রতিরক্ষাদেয়ালে বড় ফাটল তৈরি হয়। কালভার্ট থেকে প্রতিরক্ষাদেয়াল অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ওই পাশটিতে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি সরানোর পর দেয়ালের রডও দেখা যাচ্ছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করার পরও ঠিকাদারের লোকজন দায়সারাভাবে কাজ করেছেন। এতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দু-সপ্তাহ না যেতেই কালভার্টটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করার পরও ঠিকাদারের লোকজন দায়সারাভাবে কাজ করেছেন। এতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দু-সপ্তাহ না যেতেই কালভার্টটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, ওসমানাবাদ সড়ক দিয়ে নোয়ারবিলা ও রাজঘাটা এলাকার অন্তত ৬ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। কালভার্টটি সচল না হওয়ায় তাঁরা দুর্ভোগে রয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য (৯ নম্বর ওয়ার্ড) মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালভার্টটি নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হোক’।
জানতে চাইলে ঠিকাদারের হয়ে নির্মাণকাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম হয়নি। মাটি ভরাটের সময় ট্রাকের ধাক্কায় দেয়াল ভেঙেছে। প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। কালভার্টটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হবে’।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাহিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কালভার্ট ভেঙে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।