স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপকে অপহরণচেষ্টার অভিযোগ ভিত্তিহীন, দাবি নৌকার প্রার্থীর

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার। আজ সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন তিনি।

সোলায়মান হক পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, দিলীপ কুমারের ঈগল প্রতীকের কর্মী আবু তাহের বিশ্বাস ও সরোজগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। নির্বাচনকে ভন্ডুল করার গোপন নকশার অংশ হিসেবে তাঁরা এই হামলা চালান। এ ঘটনায় থানায় এজাহার করা হয়েছে।

নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী দাবি করেন, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি, নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার মামলার আসামি আবু তাহের বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার এবং এসআই হারুন অর রশিদকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান ও মহা. শামশুজ্জোহা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম ও জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন।

গত শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর অভিযোগ, শনিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের ভান্ডারদহ এলাকায় পৌঁছালে অর্ধশতাধিক যুবক তিনিসহ তাঁর কর্মীদের তিনটি গাড়ি আটকে দেন। এ সময় তাঁরা নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি গাড়ি থেকে নামলে তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। এভাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা ও পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানের সহায়তায় রাত ১১টার দিকে তিনি উদ্ধার পান।

স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, একজন প্রার্থী হিসেবে সম্মান পাব, কিন্তু তারা তা করেনি।’

শনিবার রাতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় পাঁচমাইল বাজারে স্থানীয় যুবলীগের একটি মিছিলে আবু তাহের বিশ্বাসের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় এবং নৌকার প্রার্থীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। একই দিন রাত আটটার দিকে পাঁচমাইলসংলগ্ন ভান্ডারদহ গ্রামে নৌকার পক্ষে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি যখন ভান্ডারদহ মোড়ের দিকে যাচ্ছিল, তখন মিছিলের পেছনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও কয়েকজন কর্মী-সমর্থকসহ গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হন। এ সময় আবু তাহের বিশ্বাস হ্যান্ডমাইক দিয়ে মিছিলের পেছন থেকে গালাগাল করতে থাকেন এবং মিছিলকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেন। মিছিল সরে গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িবহর নির্বিঘ্নে চলে যায়।

সোলায়মান অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্পে না বসে ভান্ডারদহ গ্রামের ত্রিমোহনী মোড়ে সড়কের ওপর দাঁড়ান। তিনি মাইকে বক্তব্য দিতে শুরু করলে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তারপরও নৌকার মিছিলটি রাস্তার সরু অংশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর দেহরক্ষী তাঁর হাতে থাকা বিশেষ লাঠি নিয়ে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী আবু তাহের বিশ্বাসের নেতৃত্বে সমর্থকেরা নৌকার মিছিলে হামলা করেন। এ সময় সরোজগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প থেকে এসআই হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্দেশে নৌকার মিছিলে হামলা চালান। এতে কর্মী-সমর্থকেরা আহত হন এবং মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

সোলায়মান হক আরও বলেন, ভান্ডারদহের ঘটনা জানার পর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান ও শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুয়ার হোসেন বিষয়টির সমাধানের জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এর আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। দুঃখজনকভাবে সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে একজনকে বাদী সাজিয়ে মামলা করা হয়।

নৌকার প্রার্থী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া, তাঁদের অবৈধভাবে আটক রাখা এবং কোনো পুলিশ সদস্যের অতি উৎসাহ যদি কোনো বিশেষ ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ কখনোই তা বাস্তবায়িত হতে দেবে না।