গাছগাছালিঘেরা বাড়ি আর প্রাণীর সঙ্গে কল্যাণের ‘সুখের’ অবসরজীবন
ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় পাখির কিচিরমিচির। হাঁকডাক দেয় পোষা কুকুর-বিড়ালগুলোও। এর মধ্যে জেগে ওঠেন গৃহকর্তা কল্যাণ মল্লিক (৭৬)। এসব প্রাণীর জন্য নিজ হাতে খাবার প্রস্তুত করেন তিনি। পরে যান গাছের কাছে পানি দিতে। নিজের অবসরজীবনে নিঃসঙ্গতা নয়; তিনি বেছে নিয়েছেন পাখি, কুকুর, বিড়াল আর গাছপালার সঙ্গ।
কল্যাণ মল্লিক যশোরের কেশবপুর উপজেলার পৌর শহরের সাহাপাড়ার বাসিন্দা। সেখানে স্ত্রী ডলি মল্লিককে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। কর্মসূত্রে ছেলে ঢাকায় থাকেন, বিয়ের পর মেয়েও রাজধানীতে থাকছেন। আপাতত কল্যাণ ও ডলির সংসারে নিত্যসঙ্গী এই প্রাণী ও গাছগুলো। এসব নিয়ে তাঁদের দিন কেটে যায়।
২০০৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন কল্যাণ মল্লিক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে অবসর ভাতা হিসেবে তিনি যে টাকা পান, তা সংসার চালানোর পাশাপাশি পোষা প্রাণী ও গাছের পেছনে ব্যয় করেন।
সম্প্রতি এক সকালে কল্যাণ মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফুল-ফলে ভরা আঙিনা, টবে সাজানো শতাধিক গাছ, পাখির কিচিরমিচির আর কুকুর-বিড়ালগুলোর উপস্থিতি—সব মিলিয়ে বাড়িটি যেন এক প্রাণবন্ত অভয়ারণ্য। কুকুর ও বিড়ালের খাবার রান্না করতে ব্যস্ত কল্যাণ। এরপর তিনি পাখিদের খাবার দিতে গেলেন। একদিকে পাখিরা খাবার খাচ্ছে, অন্যদিকে হাতে খাবার নিয়ে তিনি কুকুর-বিড়ালকে ডাকছেন। শেষে শুরু হয় গাছ পরিচর্যার কাজ।
কল্যাণ মল্লিক জানান, ১৯ বছর ধরে তিনি নিয়ম করে কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের খাদ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বাড়ির আঙিনায় সকালে নিয়ম করে খাবার খেতে আসে ঘুঘু, শালিক, প্যাঁচা, ঝুটকলি, চড়ুই, দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি। ৮ শতাংশ জমির ওপর তিন কক্ষের বাড়ি তাঁর। এর বাইরে পুরো আঙিনা ও ছাদে তিনি শতাধিক প্রজাতির ঔষধি ও ফলদ গাছ লাগিয়েছেন। আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর মতো প্রচলিত ফলের গাছের পাশাপাশি আছে উলটকম্বল, আমলকী, যজ্ঞডুমুর, ক্ষীর খেজুর, সৌদি খেজুর, শ্বেত আকন্দ ও সফেদার মতো গাছ। ফুলের মধ্যে সাতরঙা জবাসহ শিউলি, অপরাজিতা, স্থলপদ্ম, নীলকণ্ঠ, কাঠমল্লিকা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, বেলি ও ফুল। এ ছাড়া চন্দন, বট, অশ্বথ, পাকুড়গাছ লাগিয়েছেন।
স্ত্রী ডলি মল্লিকও বেশ খুশি। তিনি বলেন, যেহেতু বাড়িতে ছেলেমেয়েরা থাকে না, তাই কুকুর তাঁদের নিরাপত্তা দেয়। কুকুর, বিড়াল ও পাখির প্রতি তাঁর স্বামীর এই ভালোবাসা দেখে নিজেরও ভালো লাগে। কোনো কোনো দিন ডলি নিজেও প্রাণীগুলোকে খাবার দেন।
কল্যাণ মল্লিকের প্রতিবেশী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোহন হালদার জানান, কল্যাণের কর্মকাণ্ড অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।
জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসব কাজ করে আনন্দ পান বলে জানালেন কল্যাণ মল্লিক। এর মধ্য দিয়েই তিনি নিজের জীবনের সুখ খোঁজেন। এভাবেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান তিনি।