নরসিংদীতে সাবেক পৌর মেয়রের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ, কুশপুতুল দাহ
নরসিংদীর পৌরসভা সাবেক কমিশনার (কাউন্সিলর) মানিক হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সাবেক পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুলের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বাদীপক্ষের লোকজন। ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ মিছিলটি আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দিলে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে কামরুজ্জামানের কুশপুতুল দাহ করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে কামরুজ্জামান আদালতে যাওয়ার আগে এসব ঘটনা ঘটে। নিহত মানিক কমিশনারের স্বজন, পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতা–কর্মীসহ কয়েক শ লোক এ বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুতুল দাহে অংশ নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি শহরের ভেলানগর এলাকায় প্রকাশ্যে খুন হন নরসিংদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কমিশনার মানিক মিয়া। হত্যাকাণ্ডের পর দিন নিহত ব্যক্তির ভাই আমির ইসলাম বাদী হয়ে নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান, তাঁর বড় ভাই সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার স্বামী সুমনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১০ জুলাই মামলাটি স্থানান্তরিত হয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। পরবর্তী সময়ে ওই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১১ সালে মামলার ৩ নম্বর আসামি সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হন। ওই আদালতে পর্যাপ্ত সাক্ষী ও আসামিরা হাজির না হওয়ায় মামলাটি নরসিংদী আদালতে আবার স্থানান্তর করা হয়।
আজ দুপুরে ওই মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। এ উপলক্ষে আদালতে হাজির হন ১ নম্বর আসামি কামরুজ্জামান। এ মামলার ৯ আসামির মধ্যে সুমন কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য মামলায় আটক আছেন।
পুলিশ, বাদীপক্ষের একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে ওই মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে চত্বরে যান বাদীপক্ষের লোকজন। আসামি হিসেবে কামরুজ্জামানও আদালতে হাজির হবেন জেনে বাদীপক্ষের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের কয়েক শ নেতা–কর্মী উপজেলা কমপ্লেক্সে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণের দিকে রওনা হন। পরে জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের সামনে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশি বাধায় আদালত প্রাঙ্গণে যেতে ব্যর্থ হয়ে সেখানেই তাঁরা কামরুজ্জামানের কুশপুতুল দাহ করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদী মডেল থানা-পুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে পুলিশ প্রহরায় কামরুজ্জামান আদালতে প্রবেশ করেন।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অলিউর রহমান ও সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রিপন সরকার, জেলা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক সাহা প্রমুখ।
মামলার বাদী আমির ইসলাম বলেন, ‘২২ বছরের মাথায় মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ হলো আজ। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করে আসামি কামরুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা। এত দিন পর মামলার কার্যক্রম চলমান হওয়ার প্রধান আসামির ফাঁসির দাবিতে মানিক কমিশনারের সমর্থকেরা ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও তাঁর কুশপুতুল দাহ করেছেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল ধরেননি। নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে একটি দল আদালত প্রাঙ্গণের দিকে যেতে চেয়েছিল। আদালত প্রাঙ্গণের প্রায় ১০০ মিটার দূরত্বে তাদের থামিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আদালতের পরিবেশ নষ্ট করার অধিকার কারও নেই।
এর আগে গত বছরের ১৬ আগস্ট কামরুজ্জামান ওই মামলায় নরসিংদীর আদালতে প্রথম হাজিরা দিতে এসেছিলেন। সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে তিনি প্রবেশের পরই বাদীপক্ষের সঙ্গে আসামিপক্ষের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। হাজিরা দেওয়া শেষে আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সময় কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন বাদীপক্ষের লোকজন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গাড়িতে উঠে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার সময় কামরুজ্জামানের গাড়িতে জুতা ও বোতল ছুড়ে মারা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।