ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলে কার্যক্রম

২০২১ সালে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন।

জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগেছবি: প্রথম আলো

ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড বের হয়ে আছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। বিমেও ফাটলের দাগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে মেঝে ভিজে যায়। সেখানে চলছে রোগীদের চিকিৎসা। এ অবস্থা জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের। ফলে সব সময় ঝুঁকিতে থাকতে হয় রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬১ সালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ৫০ শয্যার একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর পর থেকে ওই ৫০ শয্যার একতলা ভবনটিকে বহির্বিভাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভবনটির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ২০২১ সালে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন। বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই বহির্বিভাগের সব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা সেবা নিতে আসেন।

গত সোমবার দুপুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটকের পূর্ব পাশে একতলা ভবনটি। পুরো বহির্বিভাগের ছাদেই ফাটল। ভবনটির ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ায় ভেতরের রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের বিমজুড়ে বড় বড় ফাটল। চিকিৎসকদের কক্ষগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। একই অবস্থা প্যাথলজি বিভাগের কক্ষের। সম্প্রতি এই কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর পড়ে। পাশেই ব্লাড ব্যাংকের কক্ষ। সেই কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের ছাদের রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে। এই দুই কক্ষে বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এই ভবন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অসংখ্য রোগী, চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকেন। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন।

প্যাথলজি বিভাগে মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর এলাকার রবিউল ইসলাম তাঁর এক স্বজনের কয়েকটি পরীক্ষা করতে দিয়েছেন। প্রতিবেদনের জন্য ওই বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘ভবনটি কেমন যেন নিচু। জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। মাঝেমধ্যেই লোকজনের মাথায় ছাদ থেকে পলেস্তারার বড় টুকরা খসে পড়ে বলে শুনেছি। ছাদের দিকে তাকালেই ভয় হয়। কখন যেন আমার ওপরও পলেস্তারা খসে পড়ে!’

ব্লাড ব্যাংকের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. আমিনুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় এটি ধসে যেতে পারে। তাঁরা নিজেরাও দায়িত্ব পালনকালে ভয়ে থাকেন। কারণ, আরও দুই বছর আগেই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শিগগিরই নতুন একটি ভবনে বহির্বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগের ল্যাবটি (পরীক্ষাগার) স্থানান্তর করা উচিত।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শামীম ইফতেখার বলেন, ভবনটি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, এখন আর সংস্কার করলেও কোনো কাজে আসছে না। ভবনের রডের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে ওই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। উপায় না থাকায় ওই ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিচ্ছেন। ভবনটির মধ্যেই সব ল্যাব (পরীক্ষাগার) ও বহির্বিভাগ। ফলে সেখানে সব সময় চিকিৎসক নার্স ও কর্মকর্তাদের অবস্থান করতে হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোগী ও তাঁদের স্বজনেরাও থাকেন।

মো. মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ভবনটি ১৯৬১ সালে নির্মিত হয়েছিল। আর এটির স্থায়িত্ব ৫০ বছর ছিল। সেই হিসেবে ২০১১ সালে ভবনের কার্যকারিতা শেষ হয়েছে। অনেকবার ভবনটির সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। কিন্তু বিকল্প ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে সেখানে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এফ এম আশ্রাফুল আওয়াল বলেন, ২০২১ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন একটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে।