মৌমাছি পালনে বছরে ৭৬ টন মধু সংগ্রহ

একেকটি মৌবাক্স থেকে সপ্তাহে এক দিন মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়।

শর্ষে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষি। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামেপ্রথম আলো

শর্ষেফুলের হলুদে গ্রামের চারপাশ সেজেছে। এর মধ্যে বসানো হয়েছে শতাধিক মৌবাক্স। এই মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। এভাবে মৌমাছি চাষ করে মানিকগঞ্জে বছরে ৭৬ টন মধু সংগ্রহ করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে অনেকে যেমন লাভবান হন, তেমনি বাড়ছে ফসলের উৎপাদনও।

সম্প্রতি এক সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি গ্রামে মৌবাক্স বসান বাগেরহাটের মৌচাষি ও মধুসংগ্রহকারী ফয়সাল হোসেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি সেখানে মৌবাক্সগুলো বসিয়ে মধু সংগ্রহ ও বাজারজাত করছেন। মৌবাক্স পরিচর্যাকারী শ্রমিক আবদুল মান্নান ও আবিদ শিকদারকে মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করতে দেখা গেল। তাঁরা জানালেন, সপ্তাহে এক দিন মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়। ১০০ বাক্স থেকে সপ্তাহে ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।

প্রায় এক যুগ ধরে মৌ চাষ ও মধু সংগ্রহ করছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ এলাকার মৌচাষি ফয়সাল হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর ৬ মাসে ১০০ বাক্স থেকে ৭০ মণ মধু পেয়েছেন। এ বছরও একই পরিমাণ মধু পাবেন বলে আশা তাঁর। প্রতি মণ মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে টাকা বিক্রি করেন। এসব মধু ভারতে ডাবর কোম্পানি, দেশে এসিআই ও এপি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়।

সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও শর্ষেচাষি—উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

মৌচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি মৌবাক্সের মধ্যে ছয় থেকে আটটি ফ্রেম থাকে। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানি মৌমাছির সঙ্গে রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। সাধারণত ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌচাষিরা।

বাকি ছয় মাস মৌমাছিদের খাবার দিয়ে লাল-পালন করেন। মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শর্ষের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ বেশি হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে শর্ষের ফুল থেকে প্রথম মধু আহরণ করা হয়। শীতের শেষে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে ধনে ও কালিজিরার ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌচাষিরা। এরপর মৌচাষিরা তাঁদের বাক্স নিয়ে ঈশ্বরদী, নাটোর, রাজশাহী, দিনাজপুর এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যান। সেখানে লিচুর ফুল থেকে মধু আহরণ করা হয়। লিচুফুলের মধু সংগ্রহ করা হয় চৈত্র মাসে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর মানিকগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়। সে সময় জেলায় ৪৫ জন মৌচাষি ৬ হাজার ৫৬৬টি মৌবাক্স থেকে প্রায় ৭৬ টন মধু সংগ্রহ করেন। এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ করা হয়েছে। এবার সবেমাত্র মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১০০ টন মধু সংগ্রহ করা।