শ্যামনগরে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা, ভাশুর–দেবর–জা গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামে এক গৃহবধূকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার মধ্যরাতের এ ঘটনায় আজ রোববার ওই গৃহবধূর ভাশুর, জা ও দেবরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত গৃহবধূর নাম তাসকিরা খাতুন (২৬)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামের ইসমাইল গাজীর স্ত্রী। তাঁর ছয় ও তিন বছরের দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় তাসকিরার ভাই আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তাকসিরার ভাশুর কামাল হোসেন গাজী, জা পারুল খাতুন ও দেবর ছামাদ গাজী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার প্রধান আসামি সাহেব আলীর মা ফাতেমা খাতুনকে শ্যামনগর থানায় ডেকে আনা হয়েছে।
স্থানীয় গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মঞ্জুর হোসেন বলেন, তাসকিরার স্বামী ইসমাইল গাজীর ও প্রতিবেশী সাহেব আলী একসঙ্গে নদীতে কাঁকড়া ধরেন। এই সুবাদে ইসমাইল গাজীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন সাহেব আলী।
একপর্যায়ে তাসকিরাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন সাহেব। এটা জানাজানি হলে তাঁকে ওই বাড়ি আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। ইসমাইল বাড়িতে না থাকার সুযোগে গতকাল রাত ১১টার দিকে সাহেব ওই বাড়িতে গিয়ে তাসকিরার সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এ কারণে প্রতিবেশী ও পুলিশের ধারণা, হত্যার সঙ্গে সাহেব আলীর যোগসূত্র থাকতে পারে।
জানতে চাইলে তাসকিরার ভাশুর কামাল হোসেন গাজী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছোট ভাই ইসমাইল গাজী গত বৃহস্পতিবার একটি কাজে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাউনিয়া গ্রামে যান। এদিকে গতকাল রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে নয়টার দিকে তিনিসহ ঘরের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ইসমাইলের ছেলেদের কান্নাকাটিতে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। স্ত্রী পারুলকে ডেকে তিনি ভাতিজারা কান্নাকাটি করছে কেন তা দেখতে বলেন। এরপর তাঁর স্ত্রী ইসমাইলের ঘরে গিয়ে দেখেন, তাসকিরা ঘরে নেই। তাঁকে ডাকাডাকি করে না পেয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে দেখতে পান বাড়িতে ঢোকার রাস্তায় তাসকিরার লাশ পড়ে আছে। তাসকিরা কখন, কী কারণে ঘর থেকে বের হয়েছিল, তা তিনি জানেন না।
প্রতিবেশী সাহেব আলীর আপত্তিকর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁর বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মামলার বাদী আবদুল্লাহ বলেন, শনিবার রাতে তাঁর বোনের ভাসুর কামাল হোসেন গাজী ও দেবর সামাদ গাজী ও জা পারুল খাতুন বাড়িতে ছিলেন। হত্যার সঙ্গে তাঁরাও জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ জন্য দুলাভাই ইসমাইল গাজীর সঙ্গে আলাপ করে তিনি এ মামলা করেছেন।
প্রতিবেশী সাহেব আলীর সঙ্গে তাঁদের বিরোধ ছিল বলে জানান তাসকিরার স্বামী ইসলাইল গাজী। তিনি বলেন, সাহেব আলী তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে থাকতে পারেন। তবে তাঁর সঙ্গে আরও লোক জড়িত না থাকলে এ ঘটনা ঘটানো কঠিন। তাঁর ভাই ও ভাইয়ের বউ জড়িত কি না, প্রশ্ন করলে ইসমাইল গাজী বলেন, ‘আমি বলতে পারব না। আমি তো বাড়িতে ছিলাম না।’
ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সরোয়ার হুসাইন বলেন, মামলার পর এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান আসামি সাহেব আলীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাহেব আলীর মা ফাতেমা খাতুনকে থানায় ডেকে আনা হয়েছে জানিয়ে পরিদর্শক সরোয়ার হুসাইন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য তাসকিরার লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।