দুর্ঘটনাস্থলে পাওয়া ১ ভরির স্বর্ণের হার তুলে দিলেন নিহতের পরিবারের কাছে

দুর্ঘটনায় নিহত এক যাত্রীর পরিবারের হাতে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের হার তুলে দেওয়া হয়। ভাঙ্গা পৌরসভা কার্যালয়ে গতকাল রোববার
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার খাড়াকান্দি এলাকায় গত শুক্রবার রাতে যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে একটি লেগুনার সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে লেগুনার চার যাত্রী নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান খাড়াকান্দি মহল্লার কাওসার মাতুব্বর। তিনি নিজেও উদ্ধারকাজে অংশ নেন। এ সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে ১ ভরি ৫ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের হার কুড়িয়ে পান।

কাওসার সে হারটি তুলে দেন প্যানেল মেয়রের কাছে। পরে প্যানেল মেয়রসহ অন্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হারটি দুর্ঘটনায় নিহত লিটন মণ্ডলের (৩৮) কাছে ছিল। পরে প্যানেল মেয়রের মাধ্যমে গত রোববার বিকেলে নিহত ব্যক্তির বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের হাতে হারটি তুলে দেওয়া হয়। হারটির বর্তমান বাজারমূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

কাওসার মাতুব্বর (৪৫)
ছবি: সংগৃহীত

কাওসার মাতুব্বর (৪৫) ভাঙ্গা পৌরসভার খাড়াকান্দি মহল্লার বাসিন্দা রফিক মাতুব্বরের ছেলে। সোমবার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি ওই এলাকায় যান এবং উদ্ধারকাজে অংশ নেন। একপর্যায়ে স্বর্ণের হারটি মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় খুঁজে পান। হারটির বিষয়ে তিনি ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ভাঙ্গা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব আলীসহ স্থানীয় লোকজনকে জানান। তাঁরা খোঁজাখুঁজির পরে জানতে পারেন, ওই স্বর্ণের হারটি লিটন মণ্ডলের (৩৮)।

লিটনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাঙ্গা বাজারের সোনার দোকানের কর্মচারী লিটন মণ্ডল তাঁর স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য ওই হারটি বানিয়েছিলেন। তিনি ভাঙ্গা বাজারে হৃদয় কর্মকারের স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন।

হৃদয় কর্মকার বলেন, লিটন তিল তিল করে টাকা জমিয়ে তাঁর স্ত্রীর জন্য এ হারটি গড়িয়েছিলেন। শুক্রবার তিনি তাঁর স্ত্রীকে সোনার হারটি দেওয়ার জন্যই নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া গ্রামে যাচ্ছিলেন লেগুনায় চড়ে। বাসের সঙ্গে লেগুনার সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলে মারা যান লিটন। আফসোস, তিনি হারটি নিজের হাতে স্ত্রীকে দিয়ে যেতে পারলেন না।

গতকাল রোববার বিকেলে ভাঙ্গা পৌরসভা কার্যালয়ে লিটন মণ্ডলের বাবা ধীরেন মণ্ডল, স্ত্রী কল্পনা মণ্ডল ও দুই ছেলে-মেয়ে প্রীতম ও প্রীতি মণ্ডলের হাতে সোনার হারটি বুঝিয়ে দেন ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র আইয়ুব আলী। হারটি ফেরত পেয়ে নিহত লিটন মণ্ডলের স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আরও পড়ুন

প্যানেল মেয়র আইয়ুব আলী বলেন, কাওসার মাতুব্বর তাঁর ওয়ার্ডের একজন বাসিন্দা। তিনি একজন কৃষক। তিনি ওই দিন দুর্ঘটনার সময় উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এ হারটি ফেরত পেয়ে সততার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। কাওসারের এ কাজের জন্য তিনি ও এলাকাবাসী গর্বিত।