বালুতে নাকাল পর্যটক–ব্যবসায়ী

রাস্তার বিভিন্ন অংশ বালুতে ঢেকে গেছে। বালুভর্তি ট্রাকগুলো কভার ছাড়াই চলাচল করছে। বালু উড়ে গিয়ে পড়ছে মানুষের চোখেমুখে।

মৈনট ঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে এমন বালুর স্তূপ রয়েছে পাঁচ থেকে ছয়টি। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। গত শনিবার তোলা ছবি
প্রথম আলো

‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত ঢাকার দোহারের মৈনট ঘাট এলাকায় রাস্তার ওপর চলছে বালুর ব্যবসা। বাতাসে স্তূপ থেকে বালু উড়ে এসে পড়ছে দর্শনার্থীদের চোখেমুখে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া বালু বহনকারী ভারী ট্রাক ও যানবাহন চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মৈনট ঘাট এলাকায় রাস্তা ঘেঁষেই রয়েছে বালুর পাঁচ থেকে ছয়টি বিশাল স্তূপ। রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভরা হয় বালু। রাস্তার বিভিন্ন অংশ বালুতে ঢেকে গেছে। বালুভর্তি ট্রাক কোনো প্রকার কভার (পর্দা) ছাড়াই চলাচল করছে। উড়ে গিয়ে পড়ছে পথচারী ও দর্শনার্থীদের চোখেমুখে।

রাজধানীর নারিন্দা থেকে আসা দর্শনার্থী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘মৈনট ঘাটে বালুর স্তূপের কারণে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। স্তূপ করে রাখা বালু উড়ে এসে শরীরে মেখে যাচ্ছে। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যমতো চলাফেরা করতে পারছি না। এমন পরিবেশ থাকলে ভবিষ্যতে আর আসা হবে না।’

বালু ওড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মৈনট ঘাট এলাকার দোকানদাররাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেল ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালু উড়ে আসার কারণে পদ্মা নদীর পাড়ে পর্যটকেরা বসে থাকতে পারেন না। আমাদের হোটেলের খাবারও নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’

বালু বহনকারী ভারী ট্রাক ও যানবাহন চলাচল করায় সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল হয়ে উঠেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইটের সুরকি ও বিটুমিন উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাস্তা কোথাও কোথাও দেবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পিচঢালা পাকা সড়ক হলেও যেখানে–সেখানে বালু জমার কারণে সড়কগুলো দেখায় কাঁচা মাটির সড়কের মতো।

মৈনট ঘাট সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজিচালক আক্কাস মিয়া বলেন, ‘ট্রাকে করে বালু বহন করায় অনেক বালু সড়কে পড়ে থাকে। বৃষ্টি হলে সড়ক কাদার মতো হয়ে পানি জমে থাকে। তখন মনে হয়, এটি পিচঢালা সড়ক নয়, যেন কাঁচা সড়ক। এতে বিপজ্জনক অবস্থায় আমাদের চলাচল করতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পত্তনদার, যুবলীগ নেতা আল আমিন চোকদার, চরবৈতা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মচারী খোকন খান, মাহবুব খান, শহীদ খান, লিয়াকত ব্যাপারী, রফিক দেওয়ান, আজাহার শিকদার, বাবুল শিকদার, আবুল খায়ের, মুরাদ মিয়া ওরফে মুরাদ মিস্ত্রি, মিজান মিয়া, চুন্নু মৃধা, মোতালেব মুন্সিসহ বেশ কয়েকজন মৈনট ঘাট এলাকায় অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছেন।

জানতে চাইলে লিয়াকত ব্যাপারী বলেন, ‘নিজেদের মালিকানার জমি ও কিছু জমি স্বজনদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা করছি। আমাদের বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানটি একটু ভেতরে, সড়কের পাশে নয়।’ মাহবুব খান বলেন, ‘মৈনট ঘাটে আমার ছাড়াও আরও তিনটি বালুর ডিপো রয়েছে। আমার ডিপো থেকে যেসব যানবাহন বালু বহন করে নিয়ে যায়, ওইসব চালককে বালুর ওপর কভার (পর্দা) দিয়ে ঢাকার নির্দেশ দিই। তবে অন্যান্য ডিপোর ব্যবসায়ীরা এটি করেন না। আমি নিয়ম মেনে বালুর ব্যবসা করছি।’

পরিবেশদূষণ হয় এমন কর্মকাণ্ড কোনো অবস্থাতেই করা যাবে না উল্লেখ করে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশ্বের আলম বলেন, ট্রাকে বালু বহন করলে বালুর ওপর অবশ্যই কভার (পর্দা) ব্যবহার করতে হবে। যাতে সেগুলো উড়ে পরিবেশদূষণ করতে না পারে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, পদ্মা নদীর তীরবর্তী মৈনট ঘাট ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় জায়গা। এখানে দর্শনার্থীরা স্পিডবোটে পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়ান। বালু ব্যবসায়ীদের কারণে জায়গাটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র বালু বহনের কারণে সেগুলো বাতাসে উড়ে দর্শনার্থীদের চোখেমুখে যাচ্ছে। এতে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

মৈনট ঘাটের পাশে নারিশা এলাকার বাসিন্দা কাশেম হাওলাদার বলেন, ‘মৈনট ঘাটে বালুর লাইগ্যা সড়কে টেহন যায় না। সড়কে হাডার সময় বালু উইড়া চোহে মুহে যায়। বাসায় যাইয়্যা চোখ পানি দিয়া না ধুইলে জ্বালাপোড়া করে। এগুলান দেহার কেউ নাই। দিন দিন যন্ত্রণা বাড়তাসে।’