কথামতো আনোয়ার বাড়িতে ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে

রংপুরের তারাগঞ্জে দুটি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রফিকার কান্না থামছে না
ছবি: প্রথম আলো

তিন বছরের মেয়ে লাবণী ও দেড় বছরের শিশু রব্বানীকে নিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন রফিকা বেগম। শিশুসন্তানদের জড়িয়ে বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘মোর দুধের জাদুর ঘরে এ্যালা কী হইবে। মোর কেমন করি সংসার চলবে। ওরা কাক বাবা কইবে। মুই কেমন করি ছাওয়ার ঘরোক নিয়া বাঁচিম।’

রফিকার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারাগঞ্জে দুটি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে তাঁর স্বামী আনোয়ার হোসেনসহ ৯ জন প্রাণ হারান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ারের বাড়িতে চলছে আহাজারি, মাতম। উপস্থিত লোকজন জানান, আনোয়ার ভূমিহীন। সহায় সম্বল বলতে দেড় শতক জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা ভাঙা দুটি টিনের ঘর। তাঁর একার আয়ে চলত বৃদ্ধ মা, বোন, স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবার। দুই বছর ধরে আনোয়ার বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। এক মাস আগে তিনি জোয়ানা পরিবহনে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ নেন। আজ সকালে তাঁর বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। এ নিয়ে স্ত্রী রফিকা ও দুই সন্তানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও বলেন। আনোয়ার ঠিকই বাড়িতে ফিরেছেন, তবে লাশ হয়ে।

ছেলের লাশ দেখে মা আলিমা বেগমও অচেতন হয়ে যান। লোকজন চোখেমুখে পানি দিলে জ্ঞান ফিরে। বিলাপ করে তিনি বলতে থাকেন, ‘মোর দাদুর ঘর যে এতিম হয়া গেল। ওমাক দ্যাখপার যে আর কায়ও থাকিল না। হামার জীবন কেমন করি বাঁচপে। খাওন খোড়ক, ওষুধ কোনঠে পামো। হামার বাঁচার যে আর পথ থাকিল না।’

ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ারুল হক বলেন, পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. মাহাবুব মোরশেদ বলেন, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে খারুভাজ সেতুর কাছে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২টি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আনোয়ার হোসেনসহ পাঁচজন নিহত হন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও চারজন মারা যান।

আরও পড়ুন