যন্ত্র নষ্ট থাকায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে হাড় জোড়া লাগানোর অস্ত্রোপচার বন্ধ 

যন্ত্র অকেজো হওয়ার আগে গত এপ্রিল মাসে হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষে অর্থোপেডিক–সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার হয়েছে ৮৬টি।

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোর জেনারেল হাসপাতালের হাড় জোড়া লাগানোর অস্ত্রোপচারে ব্যবহারের জন্য থাকা সি আর্ম নামের যন্ত্রটি অস্ত্রোপচারকক্ষে দেড় মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এতে জরুরি অস্ত্রোপচার থেমে আছে হাসপাতালটিতে।

যন্ত্রটি মেরামত ও নতুন যন্ত্র চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ১৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) প্রধান টেকনিক্যাল ম্যানেজারের কাছে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও যন্ত্রটি মেরামত বা নতুন যন্ত্র সরবরাহ করা হয়নি।

এদিকে যশোর মেডিকেল কলেজে নেই অস্ত্রোপচারকক্ষ। এরপরও সেখানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন একটি সি আর্ম যন্ত্র কিনে ফেলে রাখা হয়। যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দেড় মাস ধরে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে রয়েছে। এটি মেরামত ও একটি নতুন যন্ত্রের চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যশোর মেডিকেল কলেজে থাকা যন্ত্রটি আমাদের হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিমিউ অ্যান্ড টিসির প্রধান টেকনিক্যাল ম্যানেজার জয়ন্ত কুমার মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের সি আর্ম যন্ত্রটি মেরামত করলে হবে না। নতুন যন্ত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একটু সময় লাগবে।’

অস্ত্রোপচারকক্ষ না থাকলেও যন্ত্রটি কেনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার ওই যন্ত্র কেনার অনুমতি দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের তো যন্ত্রপাতি দেখাতে হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা ওই হাসপাতালে ইন্টার্ন করেন। তাঁদের সুবিধার জন্য যন্ত্রটি সেখানকার অস্ত্রোপচারকক্ষে ব্যবহারের জন্য অর্থোপেডিক বিভাগের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

ওই মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যন্ত্রটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শিগগিরই সেট করা হবে।’ 

ষাটোর্ধ্ব মশিউর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় হাতের কনুই ভেঙে ৮ মে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু কনুইয়ের হাড় জোড়া লাগাতে অস্ত্রোপচারের জন্য সি আর্ম যন্ত্রের প্রয়োজন। এটি অকেজো থাকায় চিকিৎসক তাঁকে অস্ত্রোপচারের তারিখ দিতে পারছেন না। 

সম্প্রতি যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন মশিউর রহমান। তাঁর বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দোনার গ্রামে। তিনি ঢাকাতে একটি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। ৫ মে ঢাকাতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাঁর হাতের কনুই ভেঙে যায়। এরপর যশোরে ফিরে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। 

মশিউর রহমানের জামাতা চা–দোকানি আবদুল্লাহ আল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শ্বশুরকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে বলেছেন। কিন্তু হাসপাতালের একটি যন্ত্র নষ্ট। সেটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের তারিখ দিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বাইরে থেকে অস্ত্রোপচার করানোর মতো টাকা নেই। আবার দীর্ঘদিন হাসপাতালে বসে থাকারও সুযোগ নেই। খুব বিপদে পড়েছি।’   

যশোর জেনারেল হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, অস্ত্রোপচার টেবিলের পাশে যন্ত্রটি অকোজো অবস্থায় পড়ে আছে। পলিথিন দিয়ে যন্ত্রের কয়েকটি অংশ বেঁধে রাখা হয়েছে।

 অস্ত্রোপচারকক্ষে থাকা অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই যন্ত্রের কাজ হচ্ছে অস্ত্রোপচারের সময় শরীরের ভেতরে হাড়ের অবস্থান দেখা। অস্ত্রোপচার যথার্থ করতে যন্ত্রটি ঠিক থাকা জরুরি। যন্ত্রটির অভাবে অনেক অস্ত্রোপচারে সমস্যা হচ্ছে।’ 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যন্ত্রটি অকেজো হওয়ার আগে গত এপ্রিল মাসে হাসপাতালের অস্ত্রোপচারকক্ষে অর্থোপেডিক–সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার হয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে ২০টি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সি আর্ম যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে। যন্ত্রটি ঠিক না থাকায় হাড়ের অবস্থান না দেখে অনেকটা অনুমান করে চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। এতে ভুল হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।