লক্ষ্মীপুরে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে তো এক ঘণ্টা লোডশেডিং

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্র
ছবি: প্রথম আলো

এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, এক ঘণ্টা লোডশেডিং হবে—লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎ পরিস্থিত এখন অনেকটাই এ রকম। সপ্তাহজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহ আর দিনে-রাতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষ। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। তবে সে তুলনায় জোগান নেই। ফলে দৈনিক গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকছেন এখানকার পল্লী বিদ্যুতের প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক।

এ অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পড়েছে বেকায়দায়। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ চেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গত শনিবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। তবে কত দিন বিদ্যুতের এই দুরবস্থা থাকবে, তা কেউই জানাতে পারেননি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ, চন্দ্রগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউপির চেয়ারম্যান সুলতান মামুনুর রশিদসহ ছয়জন জনপ্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তাঁদের এলাকাগুলোতে দিনে-রাতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। এমন অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি সমন্বয় করতে নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে, এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক আছেন। রামগঞ্জ ও নোয়াখালীর চৌমুহনী গ্রিড থেকে এসব উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য রাতে সরবরাহ চাহিদা থাকে ১১০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট। আর দিনের জন্য ৯০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট প্রয়োজন। কিন্তু গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে রাতে মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ এবং দিনে ৪৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। গত শনিবার পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল। চাহিদার মাত্র ৩৮ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ওই দিন। এক মাস ধরেই লোডশেডিং চলছে লক্ষ্মীপুরে। তবে অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ গত বুধবার থেকে।

সব মিলিয়ে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
জাকির হোসেন, মহাব্যবস্থাপক, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখা সূত্রে জানা গেছে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পৌরসভার ট্যাংকে পানি ওঠানোয় সমস্যা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

রামগঞ্জ উপজেলার লামচর এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা লক্ষ্মীপুরে। এর সঙ্গে দিনে-রাতে সমানে লোডশেডিং চলছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সবার, বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের কষ্ট-দুর্ভোগ চরমে।

রায়পুর পৌর শহরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্কশপ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকেই আইপিএস ও জেনারেটরের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে ব্যয় বেড়েছে। লক্ষ্মীপুর শহরের বিসমিল্লাহ ব্যাটারি হাউসের মালিক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ছয় মাস আগেও উন্নত মানের ব্যাটারিসহ আইপিএস সেট ৩০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যেত। এখন এটির বাজারমূল্য ৩৯ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘লোডশেডিং শুরু হওয়ায় আইপিএসের চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি দাম দিয়েও কোম্পানি থেকে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন।’

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব মিলিয়ে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন, এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিলে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মতোই বলে জানান তিনি। এমন পরিস্থিতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।