বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় নাটোরে পথে পথে গাড়ি থামিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং ৩০ নেতা–কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত হওয়ায় ঘটনায় আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আহত ব্যক্তিরা এখনো গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করতে আসেননি। পুলিশও বাদী হয়ে মামলা করেনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
ভুক্তভোগী বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোহেল রানা বলেন, তাঁরা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিজেরা মামলা করার বিষয়টি ভাবেননি। নেতাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের মাইক্রোবাসের সবাইকে ভীষণ মারা হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে। তবে নিরাপত্তার কারণে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের চালক শাহীন আলী বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। মামলা করা নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই।’ তবে মাইক্রোবাসটির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনার পর রোববার আমার মাইক্রোবাসটি দেখার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে তিনি বলেন, “মামলা করতে হবে না। প্রয়োজন হলে আমরা আপনাকে ডাকব।”’
তবে সদর থানার ওসি নাসিম আহম্মেদ বলেন, তাঁর কাছে গাড়ির মালিক আসেননি বা অভিযোগ দিতেও চাননি। অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে তিনি ওসি ভেবেছেন কি না, তা তিনি জানেন না। গাড়ির মালিক মামলা করতে চাইলে পুলিশ অবশ্যই মামলা নেবে।
গতকাল রোববার সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া টেক্সটাইল মিল, তেবাড়িয়া হাট ও সৈয়দ মোড় এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোহেল রানার নেতৃত্বে ১১ জন নেতা-কর্মী সকালে ভাড়া করা একটি মাইক্রোবাসে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হন। পথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা দত্তপাড়া হয়ে ভেতরের রাস্তা দিয়ে দিঘাপতিয়ায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে ওঠেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইক্রোবাসটি টেক্সটাইল কারখানার সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের শতাধিক কর্মী-সমর্থক দেশীয় অস্ত্র, রড নিয়ে মাইক্রোবাসটির সামনে দাঁড়ান। হামলাকারীরা প্রথমে মাইক্রোবাসের চালক শাহীন আলীকে এলোপাতাড়ি কোপান ও রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে মাইক্রোবাসের দরজা খুলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বেধড়ক পেটান এবং কুপিয়ে আহত করেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা গুরুতর আহতাবস্থায় পাশের একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাঁরা দেখেন, মাইক্রোবাসটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিস ও সদর থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা করে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাইক্রোবাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
এর আগে সকাল ছয়টার দিকে সদর উপজেলার তেবাড়িয়া হাট এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের আরেকটি গাড়িতে হামলা করা হয়। এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানাকে বেধড়ক পেটানো হয়। সদরের সৈয়দ মোড়ের নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে একই সময়ে আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে লালপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম, কাবিল উদ্দিন, যুবদল নেতা মজনু পাটোয়ারী প্রমুখ আহত হন।
মামলা না করা প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ‘হাইকমান্ডের’ নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে। নির্দেশনা পেলে ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করবেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে রোডমার্চে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করেছে।