‘আমার বাবা দিনমজুর। তোমরা দেখতে পাচ্ছ, আমার দুই হাত নেই। হাঁটা শিখেছি সাত বছর বয়সে। স্কুলে প্রথম যখন যাই, অন্য সহপাঠীরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিত। কিন্তু আমি কখনো থেমে যাইনি। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এগিয়ে গেছি।’
কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা জসীম মাতুব্বর। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ পায়ে লিখে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন। ফরিদপুর শহরের ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল সোমবার শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন মুগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর কথা শুনছিল।
জসীম এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আমি যদি পারি, তোমাদের তো আরও ভালো পারা উচিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সুনাম আনতে পারলে, শিক্ষায় কেন পিছিয়ে থাকবে!’
জসীমের এমন বক্তব্যের আগে গতকাল সকাল ৮টা থেকে কৃতী সংবর্ধনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকালে শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের পরই নিবন্ধন নম্বর অনুযায়ী নির্দিষ্ট বুথ থেকে সনদ, ক্রেস্ট ও নাশতা সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া ছিল প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) বিনা মূল্যে সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ ঘোষাল, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কাজী গোলাম মোস্তাফা, ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান।
প্রথম আলোর যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশ সবার আগে। দেশকে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মিথ্যা থেকে দূরে থাকা, মুখস্থ করা থেকে দূরে থাকা ও মাদক থেকে দূরে থাকার শপথ করান তিনি।
ফরিদপুরের অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ফরিদপুর প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা শিপ্রা গোস্বামী। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান
নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় দত্ত উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কৃতীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় নেত্রকোনা বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার জেলা কমিটির সভাপতি শিশির হোসাইন ও সহসভাপতি তন্ময় সাহা।
অনুষ্ঠানে গান, আবৃত্তি পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। এর ফাঁকে বক্তব্য দেন প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিধান মিত্র, নারীনেত্রী বেগম রোকেয়া, প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মতীন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমাদের ভালো মানুষ হওয়া খুব দরকার। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই শিখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সৎ, যোগ্য ও দায়িত্ববান নাগরিক হওয়া যায়।’
প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৪টি জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা। আয়োজনটিতে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।