গত বছর বেগুনের কেজি ছিল ১০ টাকা, এবার একটি কিনতে হচ্ছে ১০ টাকায়

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের সবজির পাইকারি বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ বেগুন বিক্রি হয়প্রথম আলোর ফাইল ছবি

রাত সাড়ে আটটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাজার করতে যান ইবনে মুরাদ (৪২)। তাঁর হাতে থাকা স্বচ্ছ ব্যাগে তিনটি মাঝারি আকারের বেগুন দেখা যাচ্ছিল। মাত্র তিনটি বেগুন নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা বাজারের ব্যবসায়ী মুরাদ উত্তর দিলেন, ‘৩টি বেগুনেই তো ৩০ টাকা নিল। শীতকালেও রাতের বেলা দেখছি বেগুনের দামে আগুন ধরেছে।’

সবজি উৎপাদনের জন্য দিনাজপুরের সুপরিচিত এলাকা বিরামপুর। এক সপ্তাহ ধরে এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে বেগুনের দাম বেড়েই চলেছে। আগের বছরগুলোতে শীত মৌসুমে গ্রামীণ বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হতো। সেখানে এখন মাঝারি সাইজের ১টি বেগুন ১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুঠোফোন সামগ্রীর ব্যবসায়ী ইবনে মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে দিন দিন সবজির দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে। গত বছর শীতকালে ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি সবজি নিয়ে বাড়িতে যেতাম। আর এখন দেড় কেজি ভালো মানের বেগুন কিনতে গেলেই ১০০ টাকা গুনতে হয়। বেগুনের কেজি এখন ৬০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় ৩০ টাকা দিয়ে মাত্র ৩টি বেগুন কিনলাম। এভাবে চলতে থাকলে তো বাড়ির বউ-বাচ্চারা ভবিষ্যতে বেগুনভাজাও খেতে পারবে না।’

আজ শনিবার সকালে বিরামপুর পৌর শহরে সবজির পাইকারি বাজারে গিয়ে জানা গেল, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে বেগুনের সরবরাহ কম। এক সপ্তাহ আগেও পাইকারি বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ বেগুন বিক্রি হতো। সেখানে এখন প্রতিদিন প্রায় ৫০ মণ বেগুন বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। ৭ দিন আগে প্রতি মণ বেগুন ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই বেগুন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের টানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে জমিতে বেগুনের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। গাছে ফুল ও বেগুনের জালি নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো জমিতে বেগুনের গায়ে কালো ছাপ পড়ছে। আবার কোনো কোনো বেগুনগাছ মরেও যাচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকলে বাজারে বেগুনের দাম আরও বাড়বে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত রবি মৌসুমে বিরামপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ২৬৫ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছিল। চলতি রবি মৌসুমে অন্যান্য সবজির আবাদ বেড়ে যাওয়ায় বেগুনের আবাদ কমেছে। এবার প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে।

বিরামপুর পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকার বেগুনচাষি হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর আমি আমার তিন বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছি। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ মণ বেগুন তুলে পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি। ঘন কুয়াশার কারণে জমিতে বেগুনের ফুল ও জালি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, উৎপাদনও কমেছে। আজ সকালে তিন বিঘা জমি থেকে মাত্র পৌনে তিন মণ বেগুন তুলতে পেরেছি। পাইকারি বাজারে ২০০০ টাকা মণ দরে বেগুন বিক্রি করলাম।’

আরও পড়ুন