ফুটবল মাথায় সাইকেলে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আবার গিনেস বুকে মাগুরার হালিম
মাথার ওপরে ফুটবল, দুই হাত হ্যান্ডেলে। এভাবে টানা ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার (১২ দশমিক ৫৫ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন মাগুরার আবদুল হালিম (৪৯)। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাগুরা ইনডোর স্টেডিয়ামে এ কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। যাচাই–বাছাই শেষে গত শনিবার এ রেকর্ডের স্বীকৃতি দেয় গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ।
চতুর্থবারের মতো গিনেস বুকে নাম লেখানো আবদুল হালিমের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে। মাথার ওপর ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটা, বাইসাইকেল চালানো বা স্কেটিং করা তাঁর কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ফুটবল নিয়ে তিনি অর্ধশতাধিক আকর্ষণীয় খেলা দেখাতে পারেন। এমন ফুটবল কসরত করেই ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আগে তিনটি গিনেস রেকর্ড গড়েন তিনি।
নিজেই ভেঙেছেন নিজের রেকর্ড
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, ‘দ্য গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ট্রাভেল্ড অন এ বাইসাইকেল ব্যালান্সিং এ ফুটবল অন দ্য হেড’ বা মাথায় ফুটবল রেখে সাইকেল চালিয়ে সবচেয়ে বেশি দূর যাওয়ার রেকর্ডের মালিক এখন আবদুল হালিম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে শুরু করে দুপুর ১২টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত একটানা মাগুরা ইনডোর স্টেডিয়ামে সাইকেল চালান তিনি। এর মধ্যে একবারও বল মাথা থেকে পড়েনি। তিনি হাত দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করেননি। এতেই মিলেছে গিনেস বুকে স্বীকৃতি।
ওই রেকর্ড গড়তে নিজের রেকর্ডই ভেঙেছেন আবদুল হালিম। ২০১৭ সালের ৮ জুন ঢাকায় ১ ঘণ্টা ১৯ মিনিটে মাথায় বল নিয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়েন তিনি। সাত বছরের বেশি সময় রেকর্ডটি তাঁর দখলেই ছিল। গিনেস বুকে তাঁর নাম প্রথমবার ওঠে ২০১১ সালে। ওই বছরের ২২ অক্টোবর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বল মাথায় নিয়ে ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে রেকর্ড গড়েন। সেই রেকর্ড অবশ্য এখন হাতছাড়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় ২০১৫ সালে গিনেস বুকে নাম ওঠে তাঁর। ওই বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আবদুল হালিম মাথায় বল নিয়ে রোলার স্কেটিং করে ১০০ মিটার দূরত্ব ছুটে যান মাত্র ২৭ দশমিক ৬৬ সেকেন্ডে। এতেই আসে গিনেস বুকে স্বীকৃতি।
আবদুল হালিম বলেন, ‘ছোটবেলায় এক গোলকিপারের বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেখে এতে আগ্রহী হই। আজ প্রায় ৩৩ বছর ফুটবল নিয়ে নানা খেলা শিখেছি, প্রদর্শন করেছি। এখনো প্রায় নিয়মিত চর্চা করি। এটাই আমার পেশা। এটা করতে গিয়ে অন্য কোনো কাজ আর শেখা হয়নি।’
কসরত দেখিয়ে চলে সংসার
৯০ দশকের শুরুতে ফুটবলের কসরত শেখার নেশা তৈরি হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা আবদুল হালিমের। এর পর থেকে এটাই তাঁর পেশা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুটবলের কসরত দেখিয়ে যে সম্মানী পান, তা দিয়ে কোনোমতে চলে সংসার। আগে যে তিনবার রেকর্ড করেছিলেন, তখন স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) ছিল। এবার কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই গড়েছেন রেকর্ড।
নতুন রেকর্ডের স্বীকৃতির পর প্রতিক্রিয়ায় আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিনেস রেকর্ড করে দেশের সুনাম বাড়িয়েছি। কিন্তু এর বিনিময়ে তেমন কিছুই পাইনি। একটা রেকর্ড করতে অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আমার মতো মানুষ এটা কীভাবে করবে? এটা করে যদি আমার কোনো আর্থিক উন্নতি না হয়, আমি যদি না খেয়ে থাকি, তাহলে অন্যরা কীভাবে আগ্রহী হবে?’
আবদুল হালিম যে কসরত ও কৌশল রপ্ত করেছেন, সেগুলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি তো চাই, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব কৌশল শিখুক। আরও নতুন নতুন রেকর্ড হোক। কিন্তু এ জন্য সরকারি–বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। আমার নিজেরও আরও রেকর্ড গড়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু সবকিছু অর্থসংকটের কাছে হার মেনে যাচ্ছে।’
মাগুরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক (জেলা প্রশাসক) মো. অহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল হালিমের অর্জনে তাঁরা আনন্দিত। তাঁরা চান, তিনি আরও কৃতিত্ব গড়ুক। জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থা তাঁর অগ্রযাত্রায় পাশে আছে। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে তাঁরা তাঁর কসরত প্রদর্শন করেন। পাশাপাশি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন।