চট্টগ্রামের সাতকানিয়া
আড়াই মাসে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি
চালকলের মালিকদের কাছ থেকে ৩৪৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্যের কোটায়।
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ধান সংগ্রহ শুরুর আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সরকারি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ধান সংগ্রহ এবং আগামী ১৫ মার্চ চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হবে।
উপজেলার ধানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রচার-প্রচারণা না থাকায় স্থানীয় অধিকাংশ চাষি জানেনই না যে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদাম কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে ধান কিনে নেয়। অল্পসংখ্যক চাষি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বিষয়টি জানলেও উপজেলা খাদ্যগুদামে ধান বহন করে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে গেলেও যাচাই-বাছাইয়ের হয়রানির কারণে চাষিরা সরকারি গুদাম কর্তৃপক্ষের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আমন মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে ৭৮৭ মেট্রিক টন আমন ধান এবং চালকলের মালিকদের কাছে থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে ৩৭৩ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চালকলের মালিকদের কাছ থেকে ৩৪৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্যের কোটায়। গত বছর আমন মৌসুমেও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গুদাম কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছর বোরো মৌসুমে মাত্র ৪০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছিল তারা।
সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের রূপকানিয়া এলাকার ধানচাষি সৈয়দুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের আমন মৌসুমে আট একর জমিতে ধানের চাষ করেছিলাম, ফলনও ভালো হয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় করার বিষয়টি আমার জানা নেই। কর্তৃপক্ষ যদি ধান ক্রয়ের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, তাহলে ভালো দাম পেলে তাদের কাছে আমরা ধান বিক্রি করতাম।’
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ডিলারপাড়া এলাকার ধানচাষি মিজানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে অনেক সময় ধানের দাম বেশি পাওয়া যায়। তা ছাড়া মিলমালিকেরা বাড়িতে এসেই ধান কিনে নিয়ে যান। সরকারি খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গেলে ধানের যাচাই-বাছাইসহ গুণগতমান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে কর্তৃপক্ষ। এসব কারণে চাষিরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।
সাতকানিয়া উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার নিবন্ধিত চালকলগুলোর মালিকেরা বাধ্য হয়েই সরকারি খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করেন। এ বছর আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত দামে লাখ টাকা লোকসান দিয়েই সরকারি খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করতে হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাহিদুল ইসলাম এবারের আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও ধান সংগ্রহ করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধান সংগ্রহ কর্মসূচির শুরু থেকেই উপজেলার ধানচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু চাষিরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ভালো দাম পাওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন। আবার ধান কেনার সময় যাচাই-বাছাইয়ের অবস্থা দেখেও চাষিরা ফিরে যান। এসব কারণে মূলত চাষিরা সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।’ তারপরও চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।