সেতুর পাটাতন ভাঙা ৮ বছর

ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে। তবে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ।

সেতুর পাটাতন ভেঙে গেছে। এক পাশে বাঁশের চাটাই বিছিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে লোকজন। এতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। শৈলকুপার হাটফাদিলপুর-নিত্যানন্দপুর সড়কে হাটফাদিলপুর বাজারের কাছে
ছবি: প্রথম আলো

আট বছর ধরে সেতুটির পাটাতন ভেঙে আছে। ভাঙা সেতুর খাদে পড়ে একজন মারাও গেছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এখনো ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে হাজারো মানুষ ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। তবে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাটফাদিলপুর-নিত্যানন্দপুর সড়কে সেতুটির অবস্থান।

এই সড়কের হাটফাদিলপুর বাজারের কাছে জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) সেচ প্রকল্পের আলমডাঙ্গা মেইন খালের ওপর সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত তাঁদের কোনো বাজেট নেই, তবে অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করছেন।

গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, সেতুর ওপর দিয়ে অসংখ্য পথচারী পার হচ্ছেন। ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। কৃষকেরা বিভিন্ন ফসল যানবাহনে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে পাটের আঁশই বেশি। সেতুর ভাঙা স্থানে যানবাহন ধরে পার করতে হচ্ছে। মোটরসাইকেলের চালকেরা সাবধানে সেতু পার হচ্ছেন।

হাটফাদিলপুর বাজারের পাশ দিয়ে জিকে সেচ প্রকল্পের একটি খাল চলে গেছে। এটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে বেরিয়ে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ হয়ে মাগুরার মধ্যে চলে গেছে। এটি প্রকল্পের প্রধান সেচ খাল হিসেবে বহমান।

সেতুর পাশে বসে কথা হয় কুমিরাদহ গ্রামের ইসলাম আলী জোয়ারদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটফাদিলপুর বাজার থেকে একটি সড়ক নিদ্যানন্দপুর বাঁওড় পর্যন্ত চলে গেছে। বাঁওড়ের অপরপ্রাপ্তে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়ন। যেখানকার মানুষও খেয়া পেরিয়ে এই সড়কে চলাচল করে। তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫ গ্রামের মানুষ সড়কটি ব্যবহার করে। এর মধ্যে চন্দ্রজানি, শিতারামপুর, পরানপুর, বাকড়ী, পানামী, কাকুড়িয়াডাঙ্গা, ভবানীপুর, সমশপুর, ফাদিলপুর উল্লেখযোগ্য। এই সড়কের হাটফাদিলপুর ও ভবানীপুর এলাকায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করেন।

পাচপাকিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করে। ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করত। ২০১৫ সালের দিকে সেতুটির পাটাতন ভেঙে যায়। ১০ ফুট পাটাতনের প্রায় সবটুকু ভেঙে পড়ে। স্থানীয়ভাবে বাঁশ-চাটাই দিয়ে ভেঙে পড়া সেতুর কিছু অংশে পাটাতন তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। সেটাও মাঝেমধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আবার মেরামত করা হয়।

শুধু পাটাতন নয়, সেতুটির রেলিংও সিংহভাগ ভেঙে গেছে। যে কারণে ভাঙা পাটাতনের ওপর চলাচল করতে গিয়ে একটু অসাবধান হলেও সেতুর নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেতুর পাশের দোকানি আকাশ হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ পড়ে গেলেই তিনি ছুটে গিয়ে উদ্ধার করেন। সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে খরচ বাড়ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে অসংখ্যবার ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেতুর খাদে পড়ে একজন মারা গেছেন। আরও অনেকে আহত হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, এই সেতু ছাড়াও তাঁদের আরও কয়েকটি সেতু মেরামত করা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ করতে পারছেন না।