শরীয়তপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে মিছিল

শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে মিছিল করেছেন। শুক্রবার রাতে জেলা শহরে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিয়েদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের প্রতীক ঘোড়া। ওই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিছিলে জীবন্ত ঘোড়া ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কামরুজ্জামান শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরই প্রার্থীরা জোরেশোরে মিছিল, সভা ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। শুক্রবার রাত রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান উজ্জ্বলের পক্ষে শরীয়তপুর জেলা শহরের রাজগঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে মিছিল বের করেন তাঁর সমর্থকেরা। তখন মিছিলে প্রার্থী কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। ওই মিছিলে দুটি জীবন্ত ঘোড়া রাখা হয়। কর্মী-সমর্থকেরা ঘোড়া দুটি সামনে রেখে মিছিল করেন। মিছিলে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।

জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে মিছিল করা যাবে না, এমন কথা আমি জানতাম না। আমি নির্বাচন আচরণবিধি পড়ে দেখিনি। পরে আমাকে একজন বলেছেন এটা নির্বাচন আচরণবিধি পরিপন্থী। আগে জানলে এমন হতো না। আমি এমন ভুল কাজ আর করব না। এর পর থেকে এত মানুষ নিয়ে মিছিলও করব না।
কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, চেয়ারম্যান প্রার্থী

শহরের প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক ঘুরে চৌরঙ্গি মোড়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে রাত ৯টার দিকে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলটি চলার সময় শহরের প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ১০ ধারায় বলা আছে, নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। ১১ ধারায় বলা আছে, নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো ধরনের মিছিল বা কোনোরূপ শোডাউন করা যাবে না। ওই বিধির ৩৩ নম্বরে বলা আছে, কোনো প্রার্থী নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তা প্রমাণিত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে মিছিল করা যাবে না, এমন কথা আমি জানতাম না। আমি নির্বাচন আচরণবিধি পড়ে দেখিনি। পরে আমাকে একজন বলেছেন এটা নির্বাচন আচরণবিধি পরিপন্থী। আগে জানলে এমন হতো না। আমি এমন ভুল কাজ আর করব না। এর পর থেকে এত মানুষ নিয়ে মিছিলও করব না।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেউ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করতে পারবেন না। আর মিছিল বা প্রচার-প্রচারণায় কোনো প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। এসব কার্যক্রম আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোনো প্রার্থী এমন করেছেন বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। এমন হলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, নুরুল আমিন কোতোয়াল, বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া, পেনসি বেগম ও আল আমিন খান। ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও ইকবাল হোসেন রতন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সামিনা ইয়াসমিন ও ফাতেমা আক্তার।