পুলিশ প্রহরায় ইজতেমা মাঠ দেখে এলেন সাদপন্থীরা

পুলিশ প্রহরায় ইজতেমার মাঠে প্রবেশ করছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের আপত্তির মধ্যে পুলিশ প্রহরায় টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শন করেছে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের একটি প্রতিনিধিদল। টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশের সহযোগিতায় আজ সোমবার সকালে মাঠ পরিদর্শনে যায় তারা। এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।

তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন জানুয়ারির ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন জানুয়ারির ২০, ২১ ও ২২ তারিখ।

ইজতেমা মাঠে পুরোদমে প্রস্তুতি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এর মাঝে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য জায়গা ঠিকমতো প্রস্তুত হলো কি না, তা জানতে আজ সকালে পুলিশ প্রহরায় মাঠ পরিদর্শনে যান সাদ অনুসারীরা। পাঁচ-ছয়জনের পুলিশ দলের মধ্যে ছিলেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলমও। সাদ অনুসারীদের দাবি, গত শনি ও রোববারও মাঠ পরিদর্শন করতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু জুবায়েরের অনুসারীদের বাধার কারণে মাঠে ঢুকতে পারেননি।

সাদ অনুসারীদের অন্যতম মুরব্বি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম পক্ষের (জুবায়ের) চেয়ে আমাদের বিদেশি মেহমান আসবেন অনেক বেশি। এ কারণে বিদেশি মেহমানদের জন্য কামরা ঠিকমতো প্রস্তুত করা হলো কি না বা আমাদের মেহমান সংকুলান হবে কি না, তা দেখতে মাঠ পরিদর্শন করতে চেয়েছিলাম। গত শনি থেকে রোববার পর্যন্ত জুবায়ের অনুসারীরা মাঠে ঢুকতে দেননি। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের তিনজন প্রতিনিধি সকালে মাঠে প্রবেশ করেছেন।’

বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বানানো কামরা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিদেশি মেহমান আসবেন অনেক বেশি। তাঁরা যে কামরা প্রস্তুত করেছেন, তা যথেষ্ট নয়। আমাদের আরও কাজ করতে হবে।’

ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক উপস্থিত এমন একটি সূত্র জানায়, বিদেশি কামরা পরিদর্শন করতে গতকাল রোববার বিকেলে সাদ অনুসারীদের তিনজন মুরব্বি মাঠে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম। কিন্তু তাঁরা ১ নম্বর ফটক পেরিয়ে বিদেশি কামরার দিকে যেতেই তাঁদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান জুবায়ের অনুসারী কয়েকজন। এ সময় ওসি চেষ্টা করেও তাঁদের ভেতরে নিয়ে যেতে পারেননি। পরে মাঠের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে রোববার রাতে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে আবারও আলোচনায় বসেন প্রশাসনের লোকজন। এরপর দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে ওসির উপস্থিতিতে আজ সোমবার মাঠ পরিদর্শনে যান সাদ অনুসারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার সাদ অনুসারী মুরব্বিরা হঠাৎ মাঠে চলে আসেন। যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য আমিও তাঁদের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে জুবায়েরপন্থীরা তাঁদের ভেতরে যেতে দিতে রাজি হননি। পরে আমরা দুপক্ষকে নিয়ে রোববার রাতে পুনরায় বসি। এরপর  সবার সম্মতিক্রমে আজ সকালে মাঠ সাদ অনুসারী প্রতিনিধিদের মাঠ পরিদর্শনে নিয়ে যাই। এ সময় কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইজতেমা মাঠসংলগ্ন টঙ্গীর বাটাগেট এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে সাদ অনুসারীদের পক্ষে অন্যতম মুরব্বি মিজানুর রহমান মোট ১০টি দাবি উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ২ নম্বর দাবিটি ছিল দ্বিতীয় পক্ষের লোকজনকে (সাদ অনুসারী) মাঠ পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া। কিন্তু এর মাঝেই এমন বাধার ঘটনা ঘটল।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘সভায় প্রশাসনের সবার উপস্থিতিতে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেছিলাম। তখন জুবায়ের অনুসারীরাও তা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আমরা মাঠে যেতে চাইলেই জুবায়ের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নানের লোকজন বাধা দেন।’

এ বিষয়ে জানতে মাহফুজ হান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে কথা হয় জুবায়ের অনুসারীদের পক্ষে মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিমের সঙ্গে। অভিযোগের বিষয়ে জুবায়ের বলেন, ‘আমরা বাধা দিয়েছি কথাটি ঠিক নয়। আমরা শুধু তাঁদের অনুরোধ করেছিলাম যেন ইজতেমা শেষ হলে তাঁরা প্রশাসনের কাছ থেকে মাঠ বুঝে নেন। কারণ, তাঁদের সঙ্গে একটি বিরোধ চলমান। এক কথায় দুই কথায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা মাঠে না আসতে অনুরোধ করেছিলাম।’