ভাতা বন্ধের কারণ খুঁজতে গিয়ে বৃদ্ধা জানলেন, তিনি ‘মারা গেছেন’

ছখিনা বেগম
ছবি : প্রথম আলো

ছখিনা বেগমের বয়স ৮৪। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। হঠাৎ তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি নাকি ‘মারা গেছেন’। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাঁকে মৃত উল্লেখ করে দরখাস্ত দিয়ে তাঁর ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন।

নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নূরুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা ছখিনা। ছখিনা বলেন, অনেক দিন আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। বয়সের ভারে কাজকর্ম করতে পারেন না। বয়সের বিষয়টি বিবেচনা করে সমাজসেবা কার্যালয় তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে বয়স্ক ভাতা দিয়ে আসছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে তিনি এই আর্থিক সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন।

ছখিনা বেগম বলেন, হঠাৎ আগস্ট মাস থেকে তাঁর মুঠোফোনে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাটি জানতে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তিনি তাঁর নাতি শিমুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা বন্ধের কারণ জানতে চান। তখন তাঁকে জানানো হয়, ঈশ্বরদী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ তাঁকে মৃত উল্লেখ করে দরখাস্ত দিয়ে তাঁর ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। দরখাস্তে লেখা আছে, আগস্ট মাসের ৮ তারিখে তিনি ‘মারা গেছেন’। এ কথা শোনার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখানকার কর্মকর্তারা তাঁকে বলেন, চেয়ারম্যান নতুন করে আবার তাঁকে জীবিত দেখিয়ে দরখাস্ত দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনা জানাজানির পর তিনি চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগীর নাতি শিমুল হোসেন বলেন, তাঁর নানির পরিবর্তে অন্য কাউকে বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য হয়তো চেয়ারম্যান এ কাজ করেছেন। এটা অন্যায়। তাঁর নানির ভাতা চালু করা উচিত।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ আজ শনিবার বলেন, তিনি বিষয়টি মনে করতে পারছেন না। ছখিনা বেগমকে মৃত উল্লেখ করেছেন কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব সরকার বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাতা বরাদ্দ কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান। তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।