বরিশালে ৫ দিনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেলেন আবেদনকারীরা

আবেদনকারীদের হাতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রত্যয়ন তুলে দিচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। আজ সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বিদেশগামী, চাকরিপ্রার্থীসহ সবাই যাতে হয়রানি ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে পারেন, সে জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ‘ওয়ান–স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সার্ভিস। গত ৩১ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কমিশনারের কার্যালয়ে এ সেবার উদ্বোধন করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, পুলিশ কমিশনার যে কথা দিয়েছিলেন, তা রেখেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এর আগেই অধিকাংশ ব্যক্তি তা পেয়ে যাচ্ছেন।

উদ্বোধনের দিন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে শুধু সরকারি ৫০০ টাকা ফি ছাড়া অন্য কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। উদ্বোধনের দিনই ৪৬ ব্যক্তি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চেয়ে নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এর আগেই আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ৫ দিনেই ৩৩ জনের প্রত্যয়নপত্র সম্পন্ন করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার রুনা লায়লা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে আজ সকালে জানান, ওয়ান–স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস চালুর পর গত ৫ দিনে তাঁরা ৪৬টি আবেদন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩৩ জনের ক্লিয়ারেন্স তাঁদের হাতে আসার পর সেগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দ্রুততার সঙ্গে অনুস্বাক্ষর করিয়ে বিতরণের জন্য তৈরি হয়েছে। বাকিগুলোও প্রস্তুত হচ্ছে।

ফোন করে এসব আবেদনকারীর প্রত্যয়ন নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেশ কয়েকজন এসে নিয়ে যান। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম তাঁদের হাতে এসব প্রত্যয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন। এ সময় পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিশের কাজ মানুষকে সেবা দেওয়া। সেই কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলে পুলিশের প্রতি মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদল হবে না। আমরা যখন এটা চালু করেছি, তখন অনেকেই এটা অবিশ্বাস্য মনে করেছে। কিন্তু আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। এই সেবা আরও উন্নত ও আধুনিক করা হবে।’

মো. সাইদ খান আবেদনের তিন দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়েছেন। তিনি বরিশালের পূর্ব রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা। চাকরির জন্য সৌদি যাবেন, তাই তাঁর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন ছিল। সাইদ বলেন, ‘আমি ৩১ আগস্ট আবেদন করি। তিন দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাব তা ভাবতে পারিনি। বিষয়টি অবিশ্বাস্য লাগছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সেবা পেতে আগে আমাদের অনেক ভোগান্তি ও টাকা খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কমিশনার আমাদের যে কথা দিয়েছিলেন, তা রেখেছেন। আমি খুবই খুশি।’

তিন দিনের মাথায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়ে খুশি আরেক আবেদনকারী নগরের আমতলা এলাকার গৃহবধূ সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি কানাডা যাওয়ার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে আবেদন করি। সোনালি ব্যাংকে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে এখানে এলে কম্পিউটারে তাঁরা আমার ফরম পূরণ করে দিয়েছেন। এরপর জমা দিয়েছিলাম। তিন দিনের মধ্যেই আমাকে ফোন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কপি নিতে ডাকা হয়েছে। আমার কাছে এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে।’

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক জনগণকে প্রদত্ত এক ধরনের সেবা। সাধারণত চাকরি বা উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে অথবা যেকোনো সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য এই ক্লিয়ারেন্স বা প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক।

ওয়ান–স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিসে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ পেতে প্রথমে প্রার্থীকে সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখায় ৫০০ টাকার ব্যাংক ট্রেজারি চালান সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। পরে ব্যাংক ট্রেজারি চালান কপি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ওয়ান–স্টপ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস ডেস্কে উপস্থিত হলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা কোনো রকম অর্থ ছাড়াই কাগজপত্র স্ক্যান করে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবেন। পরে তাঁদের দায়িত্বেই সংশ্লিষ্ট থানায় তা যাচাইয়ের জন্য পাঠাবেন এবং যাচাই করে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুস্বাক্ষর করিয়ে প্রত্যয়ন সনদ নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ফোন করবেন। আবেদনকারী এসে তাঁর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই নিয়ে যাবেন।