অন্যের কাছে সাহায্য নিয়ে জীবন চালানো দৃষ্টিহীন অরুণ পেলেন জমিসহ পাকা ঘর

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অরুণ মিয়াকে নতুন ঘরের চাবিসহ দলিল বুঝিয়ে দেন অতিথিরা। আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে
ছবি: প্রথম আলো

অরুণ মিয়া (৪৫) দুই চোখে দেখেন না প্রায় ১৫ বছর। ভিক্ষা করে এবং অন্যের থেকে চেয়েচিন্তে জীবন চালান। ছিল না নিজের কোনো থাকার জায়গা। ২৫ বছর ধরে লাখুনিয়া দীঘি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি জরাজীর্ণ ঘরে আশ্রিত ছিলেন তিনি। অবশেষে নিজের নামে দুই শতক জমি, টিনশেড পাকা ঘরসহ স্থায়ী ঠিকানা পেলেন দৃষ্টিহীন অরুণ। এখন থেকে নিজের ঘরে থাকবেন তিনি।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় দেশের ১২টি জেলার ১২৩ উপজেলার ২২ হাজার ১০১টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ৫৮টি সুবিধাবঞ্চিত ভূমি–গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২ শতক জমিসহ টিনশেড পাকা গৃহ নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এলাকায় ভিক্ষা করে, হাত পেতে ও অন্যের থেকে সাহায্য নিয়ে চলতাম। জমিসহ নতুন ঘর পাইছি। প্রধানমন্ত্রী ও এমপি সাবরে ধন্যবাদ।
অরুণ মিয়া, আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ পাকা ঘর পাওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

অরুণ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। যৎসামান্য জায়গা ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র সম্বল। ক্যানসারে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসায় তা–ও বিক্রি করে গৃহহীন হয়ে পড়ে অরুণের পরিবার। এরপর দিনমজুরের কাজ করতেন অরুণ। প্রায় ১৫ বছর আগে টাইফয়েড জ্বর থেকে তিনি দৃষ্টি হারান। এর পর থেকে চিনাইর গ্রামের লাখুনিয়া দীঘি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকের জরাজীর্ণ ঘরে অরুণের ঠাঁই হয়। ১৯৯৭ সালে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত হয়।

অরুণ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম ১৫ বছর আগে মারা যান। এরপর আর বিয়ে করেননি। ১৫ বছর ধরে চোখে দেখেন না। টাইফয়েড জ্বর থেকে এমন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় ভিক্ষা করে, হাত পেতে ও অন্যের থেকে সাহায্য নিয়ে চলতাম। জমিসহ নতুন ঘর পাইছি। প্রধানমন্ত্রী ও এমপি সাবরে ধন্যবাদ।’ তিনি জানান, তাঁর বড় বোন ফরিদা খাতুনের স্বামী আলাই মিয়া ২০ বছর আগে মারা গেছেন। ওই বোন ও ভাগনে লিটন মিয়াকে (২২) নিয়ে নতুন ঘরে থাকবেন তিনি।

আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গনে সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ভূমি ও গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জিয়াউল হক মীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম শেখ, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সেলিম শেখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ।

ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়া গ্রামের দিনমজুর রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকতাম। ঠিকমতো ঘরভাড়া দিতে পারি না। ইটের নৌকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। ১৫ বছর ধরে ইট নিয়ে কুমিল্লায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন থেকে নিজের ঘরে থাকব।’

ঘর পাওয়া অসহায় নারী মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সুলতান মিয়া রিকশা চালান। হার্টে সমস্যা, অসুস্থ। রিকশা চালাতে পারেন না। শহরের ফুলবাড়িয়ায় ঘর ভাড়া করে থাকি। আড়াই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে প্রতি মাসে কষ্ট হয়। ঘরের ভাড়া দিতে পারি না। নতুন ঘর দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’