সদ্য জিপিএ-৫ পাওয়া মেয়েটির বিয়ের আয়োজন করেছিল পরিবার
মাত্র সপ্তাহখানেক আগে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মানবিকে জিপিএ-৫ পায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এক ছাত্রী। গতকাল শুক্রবার সেই স্কুলছাত্রীকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পরিবার। খবর পেয়ে সেই বিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরিবারের দাবি, পড়াশোনা চালানোর মতো আর্থিক সংগতি না থাকায় তাঁরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলেন।
ওই স্কুলছাত্রী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। বাকি দুই ভাইও পড়াশোনা করছে। তাদের মা গৃহিণী।
ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। কাজ হলে দিনে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। আর কাজ না থাকলে আর কোনো আয়ের উৎস নেই। মাসে গড়ে ৯-১০ হাজার টাকা আয় হয়। চার শতাংশ জমির ওপর দুই কক্ষের টিনের একটি ঘরে সবাই মিলে বসবাস করেন। মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি নেই, তাঁর আয়েই পাঁচজনের সংসার চলে। প্রায়ই তাঁকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এ কারণে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
তবে আপাতত বিয়ে নয়, ওই কিশোরী স্বপ্ন দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সে জানায়, সেখানে পড়াশোনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চেয়েছে সে।
এবার যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৯। ওই বোর্ডে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ৪১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী; যাদের মধ্যে ছাত্রী এক হাজার ১৩০ জন। মানবিকে জিপিএ-৫ পাওয়া অল্প শিক্ষার্থীদের একজন ওই কিশোরী।
ওই স্কুলছাত্রী ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী জানিয়ে তাঁর বাবা বলেন, আর্থিক কারণে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে সেখান থেকে স্কুলে চলে আসে। সে এবার একটি বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছে। এই সময়ে মেয়ের পড়ালেখার খরচ তেমনভাবে দিতে পারেননি তিনি। পরীক্ষার আগের সময়ে অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়লেও খুব কষ্ট করে এই টাকা দিয়েছেন। এখন বাকি পড়ালেখা চালানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই।
ওই কিশোরীর মা বলেন, বাকি দিনে মেয়েকে কীভাবে পড়াশোনা করাবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। এমন সময় একটি ছেলের সন্ধান দেন স্থানীয় ঘটক। এ কারণে তাঁরা বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন।
ওই ছাত্রীর বিয়ের বয়স হয়নি জানিয়ে ইউএনও হোসনে আরা বলেন, মেয়েটি মেধাবী এবং বয়সও কম। এই অবস্থায় তার বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে সেটি বন্ধের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি খোঁজখবর রাখছেন যেন তাকে গোপনে বিয়ে না দেওয়া হয়।