শেফালীর খামারে বছরে লাভ ১২ থেকে ১৫ লাখ

খামারে গরুর পরিচর্যা করছেন শেফালী আক্তার। গত বুধবার সখীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফ ডেইরি ফার্মেছবি: প্রথম আলো

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে শেফালী আক্তার কিছু একটা করার চিন্তা করছিলেন। বাড়িতে তাঁর শাশুড়ি তিনটি গাভি লালনপালন করতেন। সেটাকেই আরেকটু বড় করে গরুর খামার করার চিন্তা আসে তাঁর মাথায়। স্বামীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আরও চারটি গাভি কিনে শাশুড়ির খামারটি বড় করেন তিনি। এই ঘটনা ২০১২ সালের। বর্তমানে তাঁর খামারে গরুর সংখ্যা ৭৫ টি। এ থেকে বছরে তাঁর লাভ ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে শেফালীর পরিচিতি ছড়িয়েছে আশপাশ এলাকায়।

শেফালী আক্তার থাকেন টাঙ্গাইলের সখীপুরের পূর্ব-দক্ষিণ পাড়া এলাকায়। তাঁর স্বামী শাহীনুর ইসলাম সরকারি চাকরিজীবী। শেফালী বলেন, ‘আমার শাশুড়ি ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় খামারটি করা সম্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার শাশুড়ি মারা যান। এর পর থেকে আমাকে পুরো সময়টা খামারেই দিতে হচ্ছে।’

শেফালীর পরিবার ও সখীপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুই একর জমিতে সাইফ ডেইরি ফার্ম নামের খামারটিতে ২০১২ সালে সাতটি গাভি লালনপালন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তা বাড়তে থাকে। বর্তমানে খামারে চারটি শেডে (গরুর ঘর) চার ধরনের গরু রাখা। বড় একটি শেডে ৪২টি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভি আছে। একটিতে ১২টি ষাঁড়, আরেকটিতে ১১টি বকনা ও বাকি শেডে শুধু বাছুর আছে ১০টি। গরুর খাবার দেওয়ার সুবিধার্থে আলাদা শেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খামারে গরুর খাবার রাখার জন্য টিন দিয়ে বড় একটি ঘর তৈরি করা। গরুর ঘাস কাটার জন্য আছে মেশিন। ৪২টি গাভির মধ্যে ৩২টি এখন দুধ দিচ্ছে। সারা দিনে তিন বেলা গাভি থেকে পাওয়া ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল ৭টায়, বেলা ১টায় ও বিকেল ৫টায় গাভির দুধ দহন করা হয়। প্রতি লিটার ৬০ টাকা হিসাবে দৈনিক প্রায় ১৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে। খামারে ছয়জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা খামারটি পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হয়ে শেফালীকে ২০ লাখ টাকা দামের একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে দিয়েছেন। ৭৫টি গরুর গোবর দিয়ে প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ ও রান্না করার গ্যাস উৎপাদন করা যাবে। ফলে খামারের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও কয়েকটি বাসাবাড়িতে রান্না করার গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া বর্জ্য দিয়ে জৈব সারও উৎপাদিত হবে।

ছয়জন কর্মচারীর বেতন বাদে এখন প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এই খামার থেকে ৮–১০টি পরিবারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
শেফালী আক্তার, খামারি, সখীপুর, টাঙ্গাইল
নিজের খামারে শেফালী আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি খামারে গিয়ে দেখা যায়, শেফালী আক্তার প্রতিটি ঘরে রাখা গরু দেখাশোনা করছেন। গরুর খাবার ও যত্ন নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারক করছেন। সেখানে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যবসায় মাসিক হিসাব রাখা যায়। কিন্তু খামারের লাভ-লোকসান প্রতি মাসে বোঝা যায় না। ছয়জন কর্মচারীর বেতন বাদে এখন প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এই খামার থেকে ৮–১০টি পরিবারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খামারটিকে আরও বড় করা হবে।

শেফালীর স্বামী শাহীনুর ইসলাম সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (আবেদনবিদ)। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত সময় কাটাই। শেফালী চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত খামারে ছয়জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমি আমার স্ত্রীর কাজ ও অর্জনে গর্বিত।’

সখীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সামিউল বাছির প্রথম আলোকে বলেন, শেফালী আক্তার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁর খামার দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে শেফালীকে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট উপহার দেওয়া হয়েছে।