বিসিবির বাতিল করা চান্দু স্টেডিয়ামকে নিয়ে যা মন্তব্য করেছিলেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে
ছবি: সোয়েল রানা

আন্তর্জাতিক ভেন্যু ঘোষণার পর থেকেই বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে একটি স্মারক বই খোলা আছে।

এর পাতায় পাতায় এখনও শোভা পাচ্ছে এই মাঠকে নিয়ে দেশ-বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের নিজ হাতে লেখা নানা আবেগঘন মন্তব্য ও অনুভূতি। বিশ্বসেরা তারকা ক্রিকেটাররা যে মাঠের প্রশংসা করেছেন, সেই চান্দু স্টেডিয়াম থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ভেন্যু বাতিল এবং জনবল প্রত্যাহার করেছে। বিসিবির যাবতীয় সরঞ্জামও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর বগুড়া খেলোয়াড়, দর্শক ও ক্রীড়াসংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

চান্দু স্টেডিয়ামের সেই স্মারক বইয়ের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার রবি বোপারা, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী, জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের মতো তারকা ক্রিকেটাররা শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের প্রশংসায় ভেসেছেন। মন্তব্য আছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদের। চান্দু স্টেডিয়ামের প্রশংসা করতে ভুল করেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, মমিনুল হক কিংবা নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের মতো তারকা ক্রিকেটাররাও।

২০২০ সালের আগস্টে শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে মুশফিকুর রহিম বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম সম্ভবত দেশের সেরা টার্ফ উইকেট। ’

এই স্টেডিয়ামের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিভু নিভু জ্বলতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট হঠাৎ প্রাণ ফিরেছিল বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। ২০০৬ সালে ক্রিকেটে পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে তাক লাগিয়েছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতির পর শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন হয়, যার ৪টিতেই জিতে যায় বাংলাদেশ। সেই থেকে স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে।

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তী বোলার ওয়াসিম আকরাম বগুড়ার এই স্টেডিয়ামকে ‘বিউটিফুল গ্রাউন্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ভারতের সাবেক কোচ ও ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রি লিখেছেন, ‘চমৎকার মাঠ, সঙ্গে সেরা পিচ ও উইকেট।

শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে এ মাঠ নিয়ে মন্তব্য লিখেছেন, ‘বর্তমান সময়ের সুযোগ–সুবিধাসম্পন্ন দারুণ এক মাঠ। আশা করি, দীর্ঘদিন এই মাঠ আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে থাকবে। ’

ইংল্যান্ড দলের সাবেক ক্রিকেটার রবি বোপারা শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ব্যাটিং করে এই উইকেটের ভক্ত বনে যান। মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেছেন, ‘খুবই চমৎকার উইকেট। এখানে ব্যাট করা উপভোগ্য। আশা করি, এই ভেন্যুতে শিগগিরই আবার খেলার সুযোগ পাবো। ’

বাংলাদেশের মানুষকে বরাবরই পছন্দ করেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। চান্দু স্টেডিয়ামের স্মারক বইতে তাই দেশের মানুষের প্রশংসার পাশাপাশি এই মাঠের প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘সেরা মাঠ, সেরা পিচ, সেরা বাংলাদেশের মানুষ। ’

এই মাঠের পিচকে দেশের ‘সেরা’ বলে আখ্যায়িত করে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সেরা পিচ। প্রথম শ্রেণির মাঠ। আমি এই মাঠে আবার খেলার অপেক্ষায় থাকব। ’

শুধু বিদেশি ক্রিকেটার নয়, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছেও নান্দনিক ভেন্যু শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এই ভেন্যুকে নিয়ে ২০১৪ সালে তাঁর অনুভূতি লিখেছিলেন, ‘এই মাঠের সঙ্গে আমার অনেক অনুভূতি জড়িয়ে আছে। ’

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে নিয়ে ওয়াসিম আকরাম ও রবি শাস্ত্রীর মন্তব্য
ছবি: প্রথম আলো

২০১৩ সালে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন এ ভেন্যু নিয়ে লেখেন, ‘খুবই চমৎকার মাঠ। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমার ক্যারিয়ারে আমি এই মাঠে খেলার সুযোগ পাইনি। ’

২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার মন্তব্য লেখেন, ‘খুব সম্ভবত এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বোধ্য উইকেটগুলোর মধ্যে একটি। ’

বাংলাদেশ দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদও এই ভেন্যুতে খেলতে এসে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘আমার জীবনে খেলার সুযোগ হওয়া সেরা মাঠগুলো একটি হলো। আমি বিশ্বাস করি, এটা অন্যতম সেরা ভেন্যু। ’

২০২১ সালের ১৯ জুন চান্দু স্টেডিয়ামে খেলতে এসে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। তিনি মন্তব্যের লেখেন, ‘এই মাঠে আমার অসাধারণ একটি স্মৃতি আছে। এই মাঠকে খুব মিস করি। ’

এখানে খেলতে আসা দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা শহীদ চান্দু ষ্টেডিয়ামের প্রশংসায় ভাসলেও ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবহেলায় ১৬ বছর ধরে মাঠে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হয়নি। জ্বলে ওঠেনি ফ্লাডলাইটের আলো। সব শেষ শেখ কামাল যুব ক্রিকেট আয়োজন নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিরোধের জেরে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ এনে ২ মার্চ স্টেডিয়াম থেকে জনবল প্রত্যাহারসহ ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেয় বিসিবি।