সিলেটে এক সমন্বয়ককে ‘সুযোগসন্ধানী’ দাবি করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা একাংশের
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির এক সমন্বয়ককে ‘সুযোগসন্ধানী’ দাবি করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে একাংশ। রোববার বিকেলে ২৫ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ওই সমন্বয়কের নাম গোলাম মর্তুজা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থানীয়ভাবে গঠন করা ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির একজন সমন্বয়ক। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী ২৫ জনের দাবি, গোলাম মর্তুজা ৫ আগস্টের আগের কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে নিজেকে প্রধান সমন্বয়ক দাবি করে সিলেটের আন্দোলন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা বিজ্ঞপ্তিতে ৯ জন সমন্বয়ক ও ১৬ জন সহসমন্বয়কের স্বাক্ষর আছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেটের আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। ১৪ জুলাই থেকে আন্দোলনে সমন্বয়কারী শিক্ষার্থীরা তারেক আহমেদকে সিলেটের একটি কমিটি ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। তিনি লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে না থাকায় কমিটি দিতে পারছেন না বলে জানান। পরে ২৯ জুলাই সিলেট জেলার ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে ১ নম্বরে থাকা গোলাম মর্তুজা নামের একজনকে ৫ আগস্টের আগে কোনো আন্দোলনে দেখা যায়নি। তাঁকে ৬ আগস্ট থেকে হঠাৎ মঞ্চে ও গণমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে সিলেটে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ও কমিটির ২ নম্বরে থাকা তারেক আহমেদের কাছে অন্য সমন্বয়কেরা জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবের কাছে জানতে চাওয়া হলেও কোনো সদুত্তর ও সমাধান মেলেনি। বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করে সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজাকে ভুয়া সমন্বয়ক দাবি করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ওই ২৫ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক।
জানতে চাইলে সমন্বয়ক তারেক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করেই আন্দোলনে না থাকা এক ব্যক্তিকে সমন্বয়ক হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। এতে তাঁরা বিব্রত। ওই ব্যক্তি গোপনে বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি আন্দোলনে না থেকেও তাঁর মতো করে বক্তব্য প্রচার করছেন। এমন আচরণে সমন্বয়কেরা ক্ষুব্ধ হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলে প্রথমে তিনি সাড়া দেননি। পরে ‘সিলেটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গ্রুপে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক প্রেস নোট দিয়েছেন। আশা করি নজরে এসেছে’ বলে বার্তা পাঠান। পরে তাঁকে আবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
ওই গ্রুপে কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ফয়সাল হোসেনের দেওয়া বার্তায় জানানো হয়, ‘কোটা সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে জেলা ও কলেজ পর্যায়ে আন্দোলন পরিচালনার স্বার্থে স্থানীয়ভাবে যেসব সমন্বয়ক টিম তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে স্থগিত করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট সমুন্নত রাখতে সিলেট জেলার বিভিন্ন কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অর্গানাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় প্রতিনিধিরা জেলায় একটি মতবিনিময় করেছেন।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন চলাকালে সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সিলেট জেলায় আন্দোলন পরিচালনার স্বার্থে কিছু দিয়ে স্থানীয়ভাবে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। যোগাযোগের স্বার্থে ওই সময় ওটা করা হয়েছিল। কেন্দ্র থেকে অনুমোদনের কোনো সুযোগ ছিল না। পরে কেন্দ্রের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ পরিষ্কার করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় যেসব দল গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো ‘ডিজলভড’ করা হয়েছে। যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের নিয়ে নতুন করে দল গঠন করা হবে।