৯ জন পলাতক, বাদী ও স্বজনদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ

মাদারীপুরে রাজীব সরদার হত্যা মামলায় ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাজীব সরদার নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় একসঙ্গে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ২০ জন আদালতে উপস্থিত থাকলেও পলাতক আছেন ৯ আসামি। পলাতক আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জন ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আছেন তিনজন। এদিকে পলাতক আসামির স্বজনেরা বাদী ও তাঁর স্বজনদের হুমকি দিচ্ছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় দেন। এই রায়ে বাদী ও নিহতের স্বজনেরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা এই রায়কে উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলেন আবদুল হক হাওলাদার, জহিরুল হাওলাদার, ইউসুফ হাওলাদার, হাফিজুল কাজী, তুষার শরীফ ও অলিউদ্দিন হাওলাদার। এ ছাড়া পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামাল হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার ও সেকেন হাওলাদার। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহজাহান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজিরহাওলা এলাকার মৃত রায়হান হাওলাদারের ছেলে মো. আলী হাওলাদারের সঙ্গে জামাল হাওলাদারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। আলী হাওলাদারের কাছে থাকতেন তাঁর ভাগনে রাজীব সরদার (২৫)। ওই এলাকায় আলী হাওলাদারের একটি নার্সারিতে রাজীব কাজ করতেন। ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে মামা আলী হাওলাদারের নার্সারিতে থাকা চারাগাছে পানি দিয়ে ঘরে ফিরছিলেন রাজীব সরদার (২৫)। পথে রাজীবকে একা পেয়ে কুপিয়ে জখম করেন জামাল হাওলাদার ও তাঁর লোকজন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাজীবের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর নিহত রাজীবের মামা আলী হাওলাদার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় জামালকে প্রধান আসামি করে ৪৭ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন।

রাজীবের ছোট ভাই সজীব সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা দোষে আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমার ভাইয়ের তো জমি ছিল না। কাউকে কখনো আঘাত করে নাই। তবুও আমার ভাইকে মারা হয়েছিল। আমার ভাইকে যারা মারছে, তাদের বিচারের রায় হইছে, তাতে আমরা খুশি। এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়, তার দাবি জানাই।’

তবে রায় ঘোষণার পর থেকে আতঙ্কে আছেন জানিয়ে সজীব বলেন, ‘রায় ঘোষণার পরেই আসামির স্বজনেরা আমাদের নানাভাবে হুমকি–ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি। তবে ভয় পাচ্ছি না। আমাকেও ওরা মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। জানি না, আসামিরা কীভাবে এত শক্তি পায়!’

মামলার বাদী ও রাজীবের মামা আলী হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে আসামিগো পারিবারিক জমি নিয়ে শত্রুতা বহুদিন থেকেই। কিন্তু আমার ভাগনে কী অপরাধ করেছিল? অসহায় একটা ছেলেকে কেন ওরা মেরে ফেলল? এটার জন্য এত দিন আমি মামলা চালিয়ে গেছি। মামলার রায় হয়েছে। আসামিদের বিচার পেয়েছি। এখন যেন এই রায় দ্রুত কার্যকর হয়, সেই দাবি জানাই।’

যা বলছেন আসামির স্বজনেরা

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামাল হাওলাদারের স্ত্রী ইয়াসমিন দিপা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই রায় মানতে পারছি না। আমরা হাইকোর্টে যাব। নিম্ন আদালতে এই রায়ে নির্ঘাত কোনো উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। একজন লোককে কি ২৯ জন মিলে হত্যা করতে পারে? এটা একটা সাজানো মামলা। বাদীপক্ষ চায় মামলা দিয়ে আমাদের সর্বস্বান্ত করতে। আমরা আদালতের কাছে সম্মান রেখে এই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানাব।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রায় ঘোষণার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে আসামিরা বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আবেদন রাখা হয়নি। এ কারণে আক্রশমূলক একটি রায় দিয়েছেন। মামলার এজাহার একটি নাটকের মতো সাজানো হয়েছিল। অনেক লোক এই ঘটনার সময় ছিলেন না, এমনকি মামলার সঙ্গে জড়িত নয়, তাঁদেরকেও সাজার আওতায় আনা হয়েছিল। আসামিপক্ষ এই রায়ে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ। তারা আপিল করবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, পলাতক আসামিদের ধরতে ইতিমধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। তবে বাদী ও তাঁর স্বজনদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।