নওগাঁর ৬টি আসনেই লড়বেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

আওয়ামী লীগ

নওগাঁ-৩ আসনে ‘নৌকার মাঝি’ হয়েছেন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরও ছয়জন। অপর ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদারও ছিলেন। দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নিজ সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ছলিম উদ্দিন তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মহাদেবপুরের চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম একবার। এরপর পরপর তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকরাম হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি হয়েছি।

গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছি। এবারও প্রত্যাশা করেছিলাম, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু নেত্রীর বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাইনি। আমার সমর্থকেরা চাপ সৃষ্টি করছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আশা করি, আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হব।’

২০০৮ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকীকে পরাজিত করে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আকরাম হোসেন চৌধুরী। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে আবারও তিনি দল থেকে মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা ছলিম উদ্দিন তরফদার।

দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাঁকে আবারও আওয়ামী লীগে নেওয়া হয় এবং দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন।

ছলিম উদ্দিন তরফদারের মতো দলের মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে নিজেরা বেশি জনপ্রিয় দাবি করে নওগাঁর অপর পাঁচটি আসনেও মনোনয়নবঞ্চিত পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ওই পাঁচ নেতা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আইয়ুব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক এস এম ব্রুহানী সুলতান গামা, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন, নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা ও নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবারই বক্তব্য, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সেই হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা নেই। এবার দলের কোনো নেতা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করলে বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। বহিষ্কার কিংবা অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে না। দলের এই অবস্থানকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হতে চান তাঁরা।

নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। এই আসন থেকে আরও তিনজন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়নবঞ্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসনটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা।

খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পাঁচবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এত দিন ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করেছি। এখন আরও বড় পরিসরে কাজ করে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। দলের সভানেত্রী নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই সুযোগ আমি কাজে লাগাতে চাই।’

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। আসনটি থেকে তিনি চারবার (১৯৯১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আইয়ুব হোসেন। এখন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শহীদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মোর্শেদ বাবুকে। আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পাঁচবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, নাহিদ মোর্শেদসহ আসনটি থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়ে আওয়ামী লীগের ১২ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক এস এম ব্রুহানী সুলতান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নাহিদ মোর্শেদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল জন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে। তাঁর সঙ্গে এই আসন থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরও পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলালকে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন।