মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে সমর্থন চাইলেন মাসেদুল

মাসেদুল হক
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন মাসেদুল হক রাশেদ। তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

কক্সবাজার পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানসহ সাতজন নেতা। গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে টানা তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বর্তমান প্যানেল মেয়র-১। মাহবুবুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

মনোনয়ন না পেয়ে মাসেদুল হক গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হক কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে আপনাদের সেবা করেছেন। আমি আমার মরহুম পিতার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে আগামী ১২ জুনের পৌরসভা নির্বাচনে আপনাদের দোয়া ও সমর্থন চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, মাসেদুল হক স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মাসেদুল হক কক্সবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই। তবে রাজনৈতিক কারণে দুই ভাইয়ের মধ্যে দুরত্ব রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসেদুল হক আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও আমার ভাই মুজিব (বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমান) দুজনই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কেউ পাইনি। অযোগ্য প্রার্থীকে (মাহবুবুর রহমান) দলের মনোনয়ন দেওয়ায় পৌরবাসী হতাশ হয়েছেন।’ নাগরিকদের চাপে পড়ে তিনি মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় আছেন। কক্সবাজার ফিরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ৮ এপ্রিল জেলা আওয়ামী লীগ ও শহর আওয়ামী লীগের যৌথ দলীয় সভায় মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য দলের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন নেতা–কর্মীরা। কিন্তু তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় সমর্থকেরা হতাশ হয়েছেন।

আরও পড়ুন

এ প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেও মুজিবুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র পদের জন্য জেলা থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে যে কয়েকজনে নাম পাঠিয়েছিলেন তাঁর এক নম্বরে ছিল মুজিবুর রহমানের নাম। কিন্তু দলের প্রধান মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন। মনোনয়ন না পেলেও মুজিবুর রহমানকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে হবে। যেহেতু তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, মাসেদুল হক স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাসেদুলের ছোট দুই ভাইয়ের একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আরেক ভাই কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

দলীয় সূত্র জানায়, কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তখন স্বতস্ত্র প্রার্থী হন মাসেদুল হকের ছোট ভাই শাহিনুল হক। শেষ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শাহিনুলও গতকাল রাতে বড় ভাই মাসেদুলকে পৌরসভার মেয়র পদে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।

‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবার তিনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সব শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে মাঠে নামবেন। বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকলেও তাঁর জয়লাভ সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।